ডিআইজি বলেন, “এই খুনের আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে কোনো নেতা যেন তাদের পক্ষে তদবির না করেন।”
Published : 11 May 2024, 12:05 AM
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় ‘অটোরিকশার স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে এলাকার পরিবেশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার আগুয়া গ্রামের বাজারে ঘটা এই সংঘর্ষে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার দুপুরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বানিয়াচং থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
পরে বাদ আসর জানাজা শেষে নিহতদের মরদেহ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শুক্রবার আগুয়া গ্রামে অটোরিকশা চালক কাদির মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের কান্নার দৃশ্য। তার মা আহাজারি করে বলছেন- “যারা আমার কাদিরকে মেরে ফেলেছে আল্লাহ তাদের বিচার করবে।”
একই দৃশ্য দেখা যায় নিহত লিলু মিয়ার বাড়িতেও। লিলু মিয়ার মা সুন্দর বানু বলেন- “আমার চারজন নাতি-নাতনী এতিম হয়ে গেল। এখন তাদের মুখে ভাত দেয়ার কেউ রইল না।”
ছেলে হারানো এই নারী দাবি জানান, “যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।”
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়,আগুয়া বাজারের অটোরিকশার স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ম্যানেজার বদির মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার লোকজনের বিরোধ চলছিল।
এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে গাড়ির সিরিয়াল নিয়ে ম্যানেজার বদির মিয়ার সঙ্গে অটোরিকশা চালক কাদির মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রসহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে বল্লম ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই কাদির মিয়া ও সিরাজ মিয়ার মৃত্যু হয়। এছাড়াও লিলু মিয়াকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত লিলু মিয়ার চাচাতো ভাই খলিল মিয়া বলেন- “বদরুল আলম বদির অনেকদিন ধরে আমাদের সঙ্গে ঝগড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সামান্য বিষয় থেকে পরিকল্পনামাফিক হামলা চালিয়ে আমাদের তিনজন মানুষকে তারা হত্যা করেছে।”
তবে সংঘর্ষের পর অটোস্ট্যান্ডের ম্যানেজার বদির মিয়া দাবি করেছিলেন, “চালক কাদির মিয়ার সঙ্গে সিরিয়াল দেওয়া নিয়ে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সে উত্তেজিত হয়ে তাদের লোকজনকে খবর দেয়। পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।”
এদিকে, শুক্রবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় ডিআইজি নিহতের স্বজনদের সান্ত্বনা দেয়ার পাশাপাশি ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন।
ডিআইজি বলেন, “এই খুনের আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে কোনো নেতা যেন তাদের পক্ষে তদবির না করেন। গ্রাম্য-রাজনীতির জন্য যাতে কোনো নিরীহ ব্যক্তিকে ফাঁসানো না হয়।
“৪-৫ মাসের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। পুলিশের কাজে যেন কেউ হস্তক্ষেপ না করে। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।”
ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তবে অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।
পুরানো খবর