“উপাচার্য মহোদয় কালকে কিছু আশ্বাস দিয়েছেন, সেটা যেন আশ্বাসে সীমাবদ্ধ না থাকে,” বলেন এক আন্দোলনকারী।
Published : 16 Mar 2024, 05:51 PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এই দাবি পূরণ না হলে সোমবার উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ার উচ্চারণ করা হয়েছে শনিবার আয়োজিত এক সমাবেশে।
এদিন বেলা ৩টার দিকে ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সেটি
ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা ঘুরে ফের শান্ত চত্বরে এসে সমাবেশে রূপ নেয়।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রেজোয়ানুল হক বলেন, “আজকের বিক্ষোভ থেকে আমরা ছয় দফা দাবি জানাচ্ছি। আমাদের প্রথম দাবি হলো, এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে, দ্বিতীয় দাবি অভিযুক্ত আম্মান ও দীন ইসলামকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।
“তৃতীয় দাবি হলো জরুরি ভিত্তিতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্হায়ী বহিষ্কার করতে হবে, চতুর্থ দাবি হলো ভিক্টিমের পরিবারের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, পঞ্চম দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়ন বিরোধী সেলকে স্বাধীন করতে হবে এবং আমাদের সর্বশেষ দাবি হলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করতে হবে।”
নাট্যকলা বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সোমা সুমাইয়া বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে আমরা সোমবার ভিসি ভবন অবরোধ করব। আমরা তদন্ত কমিটির পাঁচজনের মধ্যে দুজনকে নিয়ে সন্ধিহান।”
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফি আল মাহমুদ বলেন, “আমাদের কাছে থেকে ছয়টি দাবি প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে। যদি এই ছয়টি দাবি না মানা হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেব। এর সুষ্ঠু সমাধান ও তদন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি না করে- আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।
“উপাচার্য মহোদয় কালকে কিছু আশ্বাস দিয়েছেন, সেটা যেন আশ্বাসে সীমাবদ্ধ না থাকে- সেটাও নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ রকম যেন আর ঘটনা না হয়, সেটারও নিশ্চয়তা দিতে হবে।”
আন্দোলনকারী ইউভান বলেন, “ফাইরুজ অবন্তিকা একজন শিক্ষার্থীই শুধু নয়, তিনি অসাধারণ একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নিজেই বলছেন, ‘আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না’। এবার বোঝেন কী পরিমাণ মানসিক টর্চারের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তিনি।”
কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে অবন্তিকা শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় গলায় রশি বেঁধে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
মৃত্যুর ১০ মিনিট পূর্বে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন।
আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আগে নিজের ফেইসবুক পেইজে দীর্ঘ একটি লেখা পোস্ট করেন অবন্তিকা।
তিনি লেখেন, “আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।”
কুমিল্লাতেও প্রতিবাদ
অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবিতে শনিবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বরে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এতে অংশ নেন বাংলা সংস্কৃতি বলয়, বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্যাডেট ফোরাম, রং-তুলি যুব ফাউন্ডেশন, আলো যুব মহিলা কল্যাণ সংস্থা, প্রত্যাবর্তন, তারুণ্যের বাংলাদেশ, নিরাপদ চালক চাই, দেশ কল্যাণ সংস্থা, ভিবিডি কুমিল্লা, নবাব ফয়জুন্নেসা ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা কলেজ থিয়েটার, ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার, ইয়ুথ ফর পারপাস, কুমিল্লা সাইক্লিস্ট ফোরাম ও জুনিয়র ফ্রেন্ডার্স ক্লাবের প্রতিনিধিরা।
চিরনিদ্রায় বাবাকে পাশে পেলেন অবন্তিকা
কার কাছে বিচার দেব, অবন্তিকার মায়ের বিলাপ