নতুন কর্মসূচিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ থেকে সরলেন আন্দোলনকারীরা।
Published : 13 Jul 2024, 07:57 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেবেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে।
শনিবার দেওয়া নতুন কর্মসূচিতে সড়ক অবরোধের ‘বাংলা ব্লকেড’ থেকে সরলেও সারাদেশে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত থাকার ঘোষণা এসেছে।
এদিন বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, “আগামীকাল আমাদের কর্মসূচি থাকবে, জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরারবর স্মারকলিপি প্রদান এবং গণপদযাত্রা।
"এই গণপদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন।"
আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি হল- “সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷”
সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে গত কয়েকদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
হাই কোর্টের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ক্রমে ছড়িয়ে যায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচির পাশাপাশি শাহবাগে সড়ক অবরোধ করতে থাকে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে তারা গত সপ্তাহে তারা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে। রোব ও সোমবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ‘বাংলা ব্লকেড’ পালন করে একদিন বিরতি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরের দুই দিন আবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ করে। শুক্রবার নিজেদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
কোটার বিরোধিতায় চার দফা দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখন এক দফায় এসে ঠেকেছে।
গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শনিবার পুলিশের মামলা, কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্যে শনিবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন আন্দোলনকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা বারবার বলেছি সলিউশন বিকল্প কখনই সাপ্রেশন নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি পুলিশ ব্যবহার করে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের চলমান বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিকে জনভোগান্তির কারণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
”আমরা বলতে চাই, যদি প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারেন, তাহলে পৃথিবী একটি সন্তান বিবর্জিত হত। সুতরাং সুন্দর পৃথিবীর জন্য সাময়িক প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে।“
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “সরকার আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনটিকে দমনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি জানিয়ে সরকারের করণীয় বলে আসছি। তারা আমাদের দাবি পূরণে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে পারত। কিন্তু তারা সেটি না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে দমনের পরিকল্পনা করছে।
"এর মাধ্যমে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে এবং তা সরকারের জন্যই বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।"
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস- পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে বলে জানান আরেক সমন্বয়ক শারজিস আলম।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছেন। তখন কিন্তু শিক্ষার্থীরা জোর করে ক্লাসে গিয়ে বসে থাকিনি। তারা আপনাদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। আপনাদের দাবি পূরণ হয়ে গেলেও আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ক্লাস পরীক্ষায় নেওয়ার জন্য জোর করবেন না।”
আরও পড়ুন:
কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই: কাদের
কোটার বিরোধিতা: বুধবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক
কোটা আন্দোলন: পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা
কোটার মামলায় শিক্ষার্থীদের পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন ইতিবাচক
কোটার বিরোধিতা: এবার সারাদেশে 'সর্বাত্মক অবরোধের' পরিকল্পনা
কোটা সংস্কারের দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মৌন সমাবেশ