“আমি আশা করব, যেহেতু তারা আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন,” বলেন আনিসুল হক।
Published : 09 Jul 2024, 06:26 PM
কোটা নিয়ে বিচারাধীন মামলায় শিক্ষার্থীদের পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদনকে ‘ইতিবাচক’ বর্ণনা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, তিনি মনে করছেন তারা সঠিক পথে হাঁটছেন।
মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য আপিল বিভাগে দরখাস্ত করেছেন এবং আগামীকাল (বুধবার) বোধ হয় শুনানি হবে।
“আজকে আমি দেখছি, তারা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই। এখন তারা তাদের বক্তব্য আদালতে দেবেন। আমি আশা করব, যেহেতু তারা আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন।”
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের পরিপত্রকে হাই কোর্ট ‘অবৈধ’ বলে রায় দেওয়ার পর থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষিত তরুণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ওই পরিপত্র পুনর্বহালসহ আরও তিন দাবি নিয়ে ১ জুলাই থেকে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত তিন দিন ঢাকার সড়ক-মহাসড়ক কয়েক ঘণ্টার জন্য অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা। এতে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী শহর, ভোগান্তির শিকার হন নগরবাসী।
কোটা পুনর্বহালের আদেশ যেহেতু হাই কোর্ট থেকে এসেছে, সেহেতু এর সমাধানও সেখান থেকে আসতে হবে বলে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা দেখেন না তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে-পরে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও একই ধরনের মন্তব্য করেন। তারাও দাবি করেছেন, কোটা পুনর্বহালের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আদালত থেকেই এর সমাধান আসতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতে চলমান মামলা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
অবশ্য এসব বক্তব্যের পরও ‘বাংলা ব্লকেড’ নাম দিয়ে ঢাকা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাতে ঢাকার শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। এ জন্য মঙ্গলবার তারা অনলাইন ও অফলাইনে গণসংযোগ কর্মসূচি দেন। সেই সঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
সরকারি চাকরিতে কোটার ‘যৌক্তিক’ সংস্কারের দাবিতে ১৫ মিনিটের মৌন সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকালে কোটা নিয়ে আদালতে চলমান মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করেছেন কোটা ব্যবস্থার সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত দুজন শিক্ষার্থী।
মামলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আমি যতদূর জেনেছি, যখন হাই কোর্ট বিভাগে এই মামলা চলে, তখন আজকে যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন; তারা কিন্তু তাদের বক্তব্য আদালতের কাছে পেশ করার জন্য কোনো আইনজীবী নিয়োগ করেননি। তাদের বক্তব্য সেখানে দেননি। তারপরে মামলাটার রায় হয়ে গেছে, মামলাটি এখন আপিল বিভাগে।”
“সেখানেও গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত তাদের কোনো আইনজীবী ছিল না। আজকে তাদের পক্ষে আবেদন করেছেন।”
আইনমন্ত্রীও বারবার বলছেন, কোটার বিষয়টি এখন আদালতে। সেখানেই এর নিষ্পত্তি হওয়ার পক্ষে তার অবস্থান।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আপনাদের মনে রাখতে হবে, ঘটনা ঘটছে আদালতে। রাজপথে আন্দোলন করে বা চেঁচামেচি করে বা বকাবাদ্য করে এটার কিন্তু নিরসন হবে না। এটা করলে একটা পর্যায়ে হয়ত আদালত অবমাননাও হয়ে যেতে পারে।
“সঠিক জায়গা হল, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যদি মামলায় পক্ষভুক্ত হয়ে আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন, অবশ্যই আপিল বিভাগ সব পক্ষকে শুনবেন এবং সব পক্ষ শুনে আপিল বিভাগ একটা ন্যায় বিচার করবেন, এটাই আমাদের আশা।”
মঙ্গলবার কোটার বিষয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান। তারা কোটা ব্যবস্থার সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত।
চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম আবেদনকারীদের হলফনামা করার অনুমতি দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “এ মামলায় কী হতে পারে, সে বিষয়ে আমি কিন্তু কিছু বলব না। কারণ হচ্ছে, এটা সাবজুডিস (বিচারাধীন)। বাইরে থেকে একজন আইনমন্ত্রী হিসেবে বা আইনের দিক থেকে যতটুকু বলার দরকার গতকালও (সোমবার) আমি সেটা বলেছি, আজও বললাম।
“আদালতের ব্যাপারে আদালতে কথা বলতে হবে, রাস্তায় কথা বললে হবে না। আজ দেখছি যে, তারা (আন্দোলনকারীরা) আদালতে যাওয়ার জন্য একটা পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমার বক্তব্য এখানেই শেষ। বাকিটা আদালত দেখবেন।”
কোটা বিষয়ে সরকারের অবস্থান কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সরকারের অবস্থানের বিষয়ে আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার নেই এখন। কোটার ইস্যুটা এখন সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আছে। সর্বোচ্চ আদালত সেখানে সিদ্ধান্ত নেবেন, তারা সব পক্ষকে শুনে, সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন বলে আমাদের আশা।”