ওবায়দুল কাদের বলেন, “কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি ও অনেক বক্তব্য আমাদের সংবিধানের, সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিরোধী।”
Published : 13 Jul 2024, 04:43 PM
সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।”
শনিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা তুলে দিয়ে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার পর সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে, অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীরা মাঠে নেমেছিল। পরে তারা কোটা সংস্কারের দাবি সামনে নিয়ে আসে।
দাবি আদায়ে গত সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদ দিয়ে প্রতি দিনই বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায় মানুষের চলাচলে ভোগান্তি চরমে উঠে।
কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করা হাই কোর্টের রায়ের বাস্তবায়নযোগ্য অংশ প্রকাশ হয়, যাতে বলা আছে, সব কোটাই থাকতে হবে। তবে সরকার চাইলে হার পরিবর্তন করতে পারবে। আর কোটায় যোগ্য প্রার্থী না থাকলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে পারবে।
তবে আন্দোলনকারীরা চার দফা দাবি থেকে সরে এসে এখন এক দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের এক দফা হলো- ‘সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷’
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি ও অনেক বক্তব্য আমাদের সংবিধানের, সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিরোধী। সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনা সরকারি আলোকেই হবে।”
তিনি বলেন, “উচ্চ আদালতের নির্দেশনা- পবিত্র সংবিধানের আলোকেই কেবলমাত্র রাষ্ট্রপরিচালনা হয়। রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কিত সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। সেখানে আরও বলা হয়েছে, মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক অসাম্যঞ্জস্য নিরোধের জন্য নাগরিকদের মধ্যে সুষম বন্টন নিশ্চিত করার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “সংবিধানে বলা হয়েছে, জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অথচ গত কয়েক বছরে সরকারি চাকরিতে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি হতাশাজনকভাবে কমেছে।
“কোটা না থাকায় পুলিশে মাত্র চারজন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছে, ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছে দুজন মাত্র। ৫০টি জেলায় নারীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের সুযোগ পায়নি। ২৩টি জেলায় একজনও পুলিশে চাকরি পায়নি। সংবিধানের উল্লেখিত বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে সরকারি চাকরিসহ সকল ক্ষেত্র সবাই যেন সমানভাগে সুযোগ পায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, সেজন্যই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশে কোটা সবচেয়ে কম দাবি করে কাদের বলেন, “বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকায় নিয়োগ প্রায় ৭০ শতাংশের মত। ৩৩, ৩৪, ৩৫ এই তিনটি বিসিএসে ৭২ শতাংশ প্রার্থীকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যেখানে কোটায় নিয়োগ পেয়েছে ২৮ শতাংশ। শূন্য পদগুলোতে মেধাতালিকা থেকে নেয়া হয়েছে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে যেখানে মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হচ্ছে, সেখানে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই।
“দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই কোটার ভিত্তিতে সবচেয়ে কম নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে কোটা ভারতে ৬০%, পাকিস্তানে ৯২.৫ %, নেপালে ৪৫%, শ্রীলংকায় ৫০%। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় আমাদের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় কোটার প্রয়োজন রয়েছে।”
কোটাবিরোধিতায় অশুভ শক্তি নেমেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে একটি কুচক্রি মহল রাষ্ট্রকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, ২০১৮ সালে যখন কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়, তখন এই রাজনৈতিকভাবে পরাজিত অশুভ শক্তি কোটার উপর ভর করেছিল এবং সড়কের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। তখন এই অশুভ শক্তির হাতে আমাদের ধানমন্ডি পার্টি অফিসও আক্রন্ত হয়েছে।
“ওই মহলটি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করার জন্য এবং ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুতের চেষ্টা করেছিল।”
তিনি বলেন, “আমরা তারুণ্যের শক্তিতে আস্থা রাখি। আমরা বিশ্বাস করি তারুণ্যের সবাইকে নিয়ে, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন।”