এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ২০০ জন শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছেন নিপীড়নের প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টিই চাপা পড়ে যায়। কারণ, অভিযোগ দিলে কাজ হবে, আস্থার এমন পরিবেশ তৈরি হয়নি।
Published : 22 Mar 2024, 12:23 AM
যৌন হয়রানির অভিযোগ আনার আড়াই বছর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা সামনে আনছে নতুন প্রশ্ন; যৌন হয়রানি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রতিরোধ কমিটি থাকে, সেটি আদৌ কার্যকর কি না।
দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছরে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, সেগুলোর নিষ্পত্তি হয়নি এমনটাও নয়। তবে সিদ্ধান্ত আসে অনেক দেরিতে, সাজা পর্যাপ্ত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। কিছু কিছু ঘটনা আটকেও আছে।
যৌন নিপীড়ন নিয়ে আলাদা কোনো আইন নেই দেশে। ২০০৮ সালে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাই কোর্টের একটি নীতিমালাই এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার একমাত্র অবলম্বন। সেই নীতিমালায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে নারীকে প্রধান করে যৌন নিপীড়ন বিরোধী পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলা আছে।
দেড় দশক পরে এসে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল’ থাকলেও উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। হাই কোর্ট আলাদা আইন করার কথাও বলেছে। সেই আইন ১৫ বছরেও হয়নি।
নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা থাকলেও শিক্ষক ইমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি আড়াই বছরেও। তাও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে তার প্রসঙ্গটি সামনে আসায় এবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন তিনি।
এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ২০০ জন শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছেন, নিপীড়নের প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টিই চাপা পড়ে যায়। কারণ, অভিযোগ দিলে কাজ হবে, আস্থার এমন পরিবেশ তৈরি হয়নি। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপেও একই ধরনের চিত্র ফুটে উঠেছে।
একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে অভিযোগকারীর গোপনীয়তা লঙ্ঘন হয়েছে, অভিযোগ করে উল্টো হয়রানি শিকার হতে হয়েছে।
এ অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উপাচার্যের সরাসরি তত্ত্বাবধানে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি গঠনের দাবি তোলা হয়েছে। তারা বলছেন এখন যে সেল আছে তাতে সিন্ডিকেট এবং প্রক্টরিয়াল বডির প্রভাব থাকে, তাই সেখানে অভিযোগ করাও ঝুঁকিপূর্ণ।
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সাজার যে সিদ্ধান্তগুলো আসে, সেগুলো পর্যাপ্ত কি না তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। মাঝেমধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পদোন্নতি আটকে দেওয়া, কোনো কোর্স থেকে দূরে রাখা, বাধ্যতামূলক ছুটি বা এই ধরনের আদেশ আসে।
আবার যাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, অথচ সে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। নীতিমালায় বলা থাকলেও সেগুলো আদালতে পাঠানো হয় না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসলে যৌন নিপীড়নের গ্রহণযোগ্য শাস্তি হয় না। একজন শিক্ষককে তিন বছরের পদোন্নতি না দেওয়া, ইনক্রিমেন্ট বাতিল কিংবা দুই বছরের জন্য ক্লাস থেকে অব্যাহতি এগুলো কোনো শাস্তি নয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে কেউ ভয় পাবে না। মূল কথা হচ্ছে বিচারটা যথাযথ হচ্ছে না।”
কেমন শাস্তি হওয়া উচিত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “২০০৯ সালে হাই-কোর্ট যৌন নিপীড়নের শাস্তির বিষয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানা হচ্ছে না। সেখানে কিন্তু উল্লেখ করা আছে কোন অপরাধে কী শাস্তি হবে। তারপরও যদি এটা যথার্থ না হয়, সেটার জন্য আমরা একটা আইন করতে পারি। কতটুকু অপরাধের জন্য কতটুকু শাস্তি হবে, সেটা নিয়ে আইন থাকা দরকার।
“আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার শিক্ষকতায় থাকার কোনো অধিকার নাই, তাকে চাকরিচ্যুত করা উচিত। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে আজীবন বহিষ্কার করা উচিত।”
তদন্ত কীভাবে, শাস্তি কী?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়নের শাস্তির বিষয়ে কোনো লিখিত বিধান নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
বিভিন্ন যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিতে পারেন।
অভিযোগটি উপাচার্য সিন্ডিকেটের সভায় উপস্থাপন করলে একটি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযোগের সত্যতা পেলে সেটা যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে যায়।
যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল সেটা অধিকতর তদন্ত করে উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির সুপারিশের জন্য সিন্ডিকেট বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করে। বিশেষ ট্রাইবুন্যালের সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে অভিযোগ জমা দেওয়া যায়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পরিস্থিতি যখন নাজুক হয়ে যায়, স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্তগুলো আসে সাধারণত সে সময়ে।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে গত ১৪ মার্চ চাকরিচ্যুত করা হয়। সেই শিক্ষককে রক্ষার অভিযোগ উঠা বিভাগীয় চেয়ারম্যান রেজুয়ান আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এক ছাত্রী অভিযোগ করার পর শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার দাবিতে নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়, বিভিন্ন অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকে তালা দেন, পরিবহন বন্ধ করে দেন। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কও অবরোধ করেন।
২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সানওয়ার সিরাজকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন এক ছাত্রী।
সেই ছাত্রীর অভিযোগ নিয়েও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।
ব্যবস্থা গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা
হাই কোর্টের নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটার পর সাধারণভাবে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ করতে হবে। এরপর অভিযোগ কমিটি আরো ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রয়োজনে আরো ৩০ কার্যদিবস বাড়ানো যাবে।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করবে এবং সব সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রের শৃঙ্খলা বিধি অনুসারে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অভিযোগটি কোনো দণ্ডযোগ্য অপরাধ গলে সেটি আদালতে পাঠাতে হবে।
এই হিসাবে সব অভিযোগ ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। দুই বছরেও কেন হয় না- এই প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের অধ্যাপক জিনাদ হুদা তুললেন ‘ন্যায়বিচার’ এর কথা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কেউ অভিযোগ দিলে এটা অনেক ধরনের প্রসেস ও ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে যায়। কোনো অভিযোগ আমাদের সেলে আসার আগে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির মাধ্যমে এক দফা তদন্ত হয়। এরপর আরও যাচাইবাছাই করার জন্য উপাচার্যের নির্দেশ বা সিন্ডিকেটের সুপারিশক্রমে আমাদের এখানে আসে।
“একজন ব্যক্তি যেই হোক, তাকে অভিযুক্ত করার জন্য সত্যতা, বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার জন্য সময় লাগে। আপনি কাউকে ফাঁসি দেবেন, তাহলে তো অনেক স্তর পার হয়ে বিচার হতে হবে। যিনি অভিযোগ করছেন, এটা সত্য কিনা সেটা যাচাই করতে হয়। অনেকগুলো বিষয় ফিল্টারিং হয়ে আসে, যাতে করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।”
অভিযোগ কত, নিষ্পত্তি কেমন
দেশের প্রথম সারির পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে গত দুই বছরে ২৯ টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাতটি অভিযোগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি এবং চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২টি করে অভিযোগ জমা পড়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জেবউননেছা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ১৪ টা অভিযোগ নিয়েই কাজ করেছি। এর মধ্যে ১২ টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। দুটি তদন্তাধীন।
“আমার সময়কালে একজনকে আজীবন বহিষ্কার করেছি। আরেকজনকে ছয় মাসের বহিষ্কার করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করি। কোনো ছাড় দেই না।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব বলেন, “তিনটা তদন্ত করে আমরা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। আরও চারটার বিষয়ে অভিযোগকারীরাই এগিয়ে আসেনি। সেজন্য আমরা সমাধানের দিকে যেতে পারিনি।”
গত ২ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাদ হুদা।
তিনি বলেন, “আমাদের সুপারিশের ভিত্তিতে দুটি অভিযোগের বিষয়ে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকি দুটি প্রক্রিয়াধীন।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি বিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক জারিন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা নিষ্পত্তি হয়েছে। আরেকটা প্রায় নিষ্পত্তির পথে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, “২০২২ সালের নভেম্বর মাসে একটা নিষ্পত্তি হয়েছে। আরও একটি (মিমের অভিযোগ) প্রক্রিয়াধীন।”
আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থী অবন্তিকার যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের কাছে অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
হিতে বিপরীত
২০২১ সালের ডিসেম্বরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে একই বিভাগের ছাত্রী কাজী ফারজানা মিম অভিযোগ আনার পর ঘটেছে অনেক কিছুই। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় তোলপাড় না হলে এই সিদ্ধান্তও আসত কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
অবন্তিকার আত্মহত্যার পরই মিম তার অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন, পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও বঙ্গভবনে গিয়ে অভিযোগ জমা দেন।
এরপর ঘটেছে অনেক কিছু। গোয়েন্দা কার্যালয়ে দুই শিক্ষককে ডেকে নিয়ে মিমের মুখোমুখি করানো হয়, মিমসহ তার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মার্কশিটের ছবি ছড়িয়ে পড়ে, শিক্ষক ইমনের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে খোলা হোয়াটস অ্যাপ নম্বর থেকে জনৈক ছাত্রীকে ক্লাসে প্রথম বানিয়ে দিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের কথা বলে দিয়ে ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার প্রস্তাবের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে।
প্রথমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া অভিযোগে মিম বলেছেন, তিনি যখন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, তখন থেকে তাকে নানাভাবে হেনস্তা করা শুরু হয়।
“অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। এতে আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে একঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো হয়। অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।”
মিম বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি তারা আমার গ্রামের বাড়িতে পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। আমার বাবা-মা অসুস্থ, তাদের ওপর প্রেশার করেছে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য। অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় আমাকে বিভাগের রুমে কোনো মহিলা শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে দরজা আটকে জোর জবরদস্তি করা হয়েছে।”
এই ঘটনায় বুধবার শিক্ষক ইমন ছাড়াও বিভাগীয় চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিমকে ডেকে মিমের মুখোমুখি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সবার সঙ্গে কথা বলা শেষে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, “দুই শিক্ষক আমাদের বলেছেন, তারা মিমকে কখনো হুমকি দেননি, আগামীতেও দেবে না এবং চলাফেরায় কোনো বাধা দেবেন না।”
মিম যে মাসে তার অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন একই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী।
অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে প্রায় ২ বছর পর ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর সাজ্জাদের পদোন্নতি তিন বছরের জন্য পদোন্নতি স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। ততদিনে অভিযোগকারীর ছাত্রত্বই শেষ হয়ে যায়।
মিম অভিযোগ দেওয়ার পর তাকে হুমকি ও চাপ দেওয়ার যে অভিযোগ এনেছেন একই ধরনের অভিযোগ এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক ছাত্রীও।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে গিয়ে উল্টো আমি হয়রানির শিকার হয়েছি। তদন্ত করতে গিয়ে আমাকে অনেক উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন ও বাজে আচরণ করা হয়েছে।
“নিপীড়নবিরোধী সেলে কালক্ষেপণ করা হয়েছে, যাতে আমার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যায়। ছাত্রত্ব শেষ মানে বিচারও শেষ, তাদের এ ধারণা ছিল। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। দুই বছর পর হলেও বিচার পেয়েছি। কিন্তু এই বিচার যথেষ্ট নয়। শুনেছি আদালতের মাধ্যমে ওই শিক্ষক শাস্তি মওকুফের চেষ্টা করছেন।”
অভিযোগই করে না ‘বেশিরভাগ’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলীম ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে স্নাতকোত্তর ও স্নাতকে অধ্যয়নরত ২০০ ছাত্রীর ওপর একটি জরিপ করেন।
‘বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরুষতান্ত্রিক ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধের কৌশল’ শিরোনামের গবেষণায় উঠে আসে, যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ ছাত্রীই অভিযোগ করেন না।
নিপীড়নের ঘটনায় মাত্র ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এবং বাকি ৫ শতাংশ সেলে।
৯২ শতাংশ জানান, ন্যায়বিচার না পাওয়া ও চরিত্র হননের ভয়ে তারা সেলে অভিযোগ করেননি।
গবেষণায় ছাত্রীদের অভিযোগ, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ‘প্রভাবশালী’। শিক্ষকেরা ভুক্তভোগীদের তেমন সাহায্য করেন না, মনোভাবও ততটা সহযোগিতাপূর্ণ নয়। এ অবস্থায় তারা অসহায় বোধ করেন।
এতে বলা হয়, ৫৬ শতাংশ ‘নিপীড়কই’ সহপাঠী। ২৪ শতাংশ তাদের চেয়ে ছোট বা বড়। ১১ শতাংশ বহিরাগত ও ৯ শতাংশ শিক্ষক।
অধ্যাপক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচার পাবে না, এই আশঙ্কাতেই তারা অভিযোগ করতে চায় না। ওদের আসলে ভয় থাকে যে, ওরা প্রতিকার পাবে না, গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে না। আগে থেকে কেউ বলে না, যখনই কোনো ঘটনা ঘটে, তখন তারা মুখ খুলতে সাহস পায়। যথাসময়ে বিচার না হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি আছে। এতে অনেক ছাত্রী আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠেন।
“অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত, তারা অনেক প্রভাবশালী বা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী। তাদের রক্ষার জন্য রাজনৈতিক এবং প্রভাবশালীদের চাপ থাকে। ফলে অনেক ঘটনাই ধামাচাপা দেওয়া হয়। অনেক ঘটনার বিচার হয় না।”
যৌন নিপীড়নের অভিযোগ না করায় নিপীড়ক আরও ‘হিংস্র’ হয়ে উঠে বলে মনে করেন অধ্যাপক আব্দুল আলীম।
তিনি বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকও হয়রানির শিকার হয়েছে, কিন্তু তিনি কখনো অভিযোগ করেননি। তিনি শিক্ষক হয়ে যদি অভিযোগ না করেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা কীভাবে সাহস পাবে? ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ না করার কারণে একাধিক ছাত্রী, শিক্ষকের স্ত্রীকে হয়রানি করেছে। সবশেষ একজন নাবালিকা মেয়েকেও বিশ্রীভাবে হয়রানি করেছে।”
নিরাপত্তাহীনতার কারণে নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ দিতে চান না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন।
তিনি বলেন, “একজন শিক্ষার্থী যখন অভিযোগ করতে চান, তখন তাকে বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করতে হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিযোগকারীর নিরাপত্তা বিধান ও লেখা-পড়া চালিয়ে যাওয়ার সিস্টেম গড়ে ওঠে নাই।
“যখনই অভিযোগ দেওয়া হয়, তখন তাকে নানা চাপ ও ভয়-ভীতি দেখানো হয়। যারা অভিযুক্ত তারা বিভিন্ন জনকে ধরে। ছাত্রনেতাদের ধরে, প্রভাবশালী শিক্ষকদের ধরে। অভিযুক্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে সেখানে নানা ধরনের চাপের সম্ভাবনা থাকে। ফলে সেখান থেকে অনেকে পিছপা হয়ে যায়। চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত একজন অভিযোগকারী দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে সেটার বিচার হয়। বাকি অনেকগুলোই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হাওয়া হয়ে যায়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে সেলের প্রধান অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ দিলেও তা প্রত্যাহার করে নেয়। লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। কিন্তু অনেকে বলে লিখিত দিতে হবে কেন?”
আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশন এইড পরিচালিত এক গবেষণাতেও বলা হয়েছে, কর্মজীবী নারীদের প্রায় ৬৫ শতাংশ হাই কোর্টের এই নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও প্রায় ৮০ শতাংশ এ বিষয়টি নিয়ে জানে না।
নতুন প্রতিরোধ কমিটির দাবি কেন
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শাহ সোবহান সাকিব যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে নতুন কমিটি করার দাবি করেছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, বর্তমান যে সেল, সেটি কার্যকর নয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাকিব বলেন, “তদন্ত করার জন্য অভ্যন্তরীণ একটা কমিটি করে তারা প্রক্টরিয়াল টিম থেকে। তারপর তদন্ত প্রতিবেদনের ফলাফল জমা দেয় সিন্ডিকেটে। এটাও একটা অভ্যন্তরীণ কমিটি। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেয়- তারা কী করবে না করবে। প্রক্রিয়াটা অনেক লম্বা হয়।
“যদি সবই ইন্টারনাল লোকজন থাকে তাহলে একটা প্রভাব থাকে। কারণ প্রক্টরিয়াল বডির সবারইতো পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে। তাদের কোনো সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তারা ফেভার টানার চেষ্টা করে।”
তিনি বলেন, “আমরা দাবি করছি, এই কমিটিতে বাইরে থেকে একজন আইনজীবী এবং একজন মানবাধিকারকর্মীকে রাখতে হবে। তদন্ত চলার পর থেকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, যদি সাময়িক সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তাদেরকে এই সময়টায় বরখাস্ত করে রাখতে হবে।”
আইন কবে
২০০৯ সালের ১৪ মে হাই কোর্ট শিক্ষাঙ্গণ ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালা করে দেয়। সেখানে বলা হয়, যত দিন এ বিষয়ে উপযুক্ত আইন না হবে তত দিন এই নীতিমালা অনুসরণ ও বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক।
কিন্তু গত ১৫ বছরেও এ বিষয়ে কোনো আইন করা হয়নি। প্রচলিত আইনগুলোতেও যৌন হয়রানিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফাওজিয়া মোসলেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন করার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমরাসহ কয়েকটি সংগঠন আইনটি করার জন্য বেশ কয়েকবার বসেছি। এখন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে।
“যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন এখন সময়ের দাবি। আমরা চাই আইনটি চূড়ান্ত হোক এবং সংসদে দ্রুত আইনটি পাস হোক।”
প্রয়োজন সচেতনতা
নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব।
তিনি বলেন, “অনেকে জানে না কীভাবে অভিযোগ জমা দিতে হয়, কীভাবে তদন্ত হয়, গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় কি না।
“আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। ঈদের ছুটির পরে একটা সেমিনার করব, যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগ থেকে দুজন করে প্রতিনিধি বিষয়গুলো জানতে পারে। এটা করলে সবাই সচেতন হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জেবউননেছা বলেন, “আমরা সমস্ত ফ্যাকাল্টিকে চিঠি দিয়েছি, আমরা সব জায়গায় প্রচারণাটা করব।
“এটা শুধু কমিটিরই কাজ নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে জাগ্রত করা দরকার। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এই সেলের বিষয়ে জানাতে হবে। তাহলে যারা নিপীড়ক তারা ভয় পাবে। নিপীড়িতরা সাহস পাবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সচেতনতার জন্য আমরা কিছু কাজ করব ভাবছি। নতুন ছাত্ররা যারা আসছে, তাদেরকে আমরা মেন্টাল হেলথের উপর প্রশিক্ষণ দেব। এ জন্য আমরা ম্যানুয়াল তৈরি করছি। এটা ভেতরে যৌন নিপীড়নের বিষয়গুলো সংযুক্ত করব।
“অনেক সময় একজন শিক্ষার্থী মফস্বল থেকে আসে। সে যে যৌন নিপীড়নের দিকে ক্রমশ ধাবিত হচ্ছে, সেটা বোঝে না। কী ধরনের আচরণ হলে যৌন নিপীড়ন বোঝায়, ওগুলোও আমরা ম্যানুয়ালে উল্লেখ করব।”
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন কাজী নাফিয়া রহমান ও সাবিকুন্নাহার লিপি
আরো পড়ুন:
জগন্নাথে উপাচার্যের তত্ত্বাবধানে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’র দাবি
প্রতিকার চেয়ে রাষ্ট্রপতির দুয়ারে জগন্নাথ শিক্ষার্থী মিম
‘যৌন হয়রানি’: গোয়েন্দা কার্যালয়ে ছাত্রীর মুখোমুখি জগন্নাথের দুই শিক্ষক
যৌন নিপীড়ন: জগন্নাথ শিক্ষক শাহেদ ইমন বরখাস্ত
রঙ-তুলির আঁচড়ে জগন্নাথে অবন্তিকা-অংকনকে স্মরণ
জগন্নাথের মিমের পরীক্ষা দেওয়ার পথ খুলল
যৌন হয়রানি: ভিকারুননিসার এক শিক্ষক প্রত্যাহার
যৌন হয়রানি: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষক বরখাস্ত
ঢাবিতে ‘যৌন হয়রানি’: শিক্ষক নাদির জুনাইদকে ৩ মাসের ছুটি