আমদানিকারকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। ব্রাজিলে অশোধিত চিনির দামও বেড়ে গেছে। তাই আমদানিতে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছেন তারা।
Published : 20 Nov 2023, 11:34 PM
টাকার ক্রমাগত দরপতন, চাহিদা অনুযায়ী ডলার না পাওয়া ও আন্তর্জাতিক বাজারে দরের ঊর্ধ্বগতির কারণ দেখিয়ে দেশের পাঁচটি বেসরকারি চিনি পরিশোধন কারখানার মধ্যে অন্তত দুটি থেকে বাজারে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে গত এক মাস ধরে খুচরা বাজারের জন্য ঘোষিত দরের চেয়ে অন্তত ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে খাদ্য উপকরণটি।
সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা সুগার রিফাইনারি, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি (ঈগলু) ও দেশবন্ধু সুগার মিল দেশের বার্ষিক ১৮ থেকে ২০ লাখ টন চিনির চাহিদা পূরণ করে।
তবে কাঁচামাল সংকটের কারণে সিটি গ্রুপের তীর ও ঈগলু ব্র্যান্ডের চিনি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সোমবার ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। যদিও সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী চিনির সর্বোচ্চ খুচরা দর হওয়ার কথা ১৩০ টাকা।
মিরপুরের পীরেরবাগের মুদি দোকানি আল আমিন বলেন, “পাইকারি বাজার থেকে গতকাল ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি ৬ হাজার ৮০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। ফলে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১৩৬ টাকা। আমরা বিক্রি করছি ১৪০ টাকায়।”
চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিল থেকে এখন প্রতিকেজি ১৩৭ টাকায় চিনি কিনতে হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকে লোকসান দিয়ে ১৩৬ টাকায় চিনি বিক্রি করছেন।”
চাহিদা কমে যাওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “বাজারে প্রচুর ভারতীয় চিনি আসছে অবৈধভাবে। সেই কারণে এখন সরবরাহ সংকটটা ওভাবে বোঝা যাচ্ছে না। যারা মিল থেকে চিনি কিনে নিয়ম মাফিক ব্যবসা করছেন তারা চাপে আছেন, লোকসান দিতে হচ্ছে।”
সিটি গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিনি শিল্পে এখন কাঁচামালের সংকট আছে। ডলারের অভাবে সময় মতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। সরকার দাম যাই নির্ধারণ করুক না কেন, গত এক মাসে ডলারের দাম ১১৭ টাকা থেকে বেড়ে ১২৫ টাকা হয়েছে। আমাদেরকে এই দরেই কিনতে হচ্ছে।
“আবার গত এক মাসে ব্রাজিলে অপরিশোধিত চিনির দাম ৬২০ ডলার থেকে বেড়ে গিয়ে ৬৮০ ডলারে উঠেছে।”
ডলারের দরের ঊর্ধ্বগতির কারণে শতভাগ এলসি মার্জিন এখন ১২০ শতাংশে পৌঁছে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ ১১৪ টাকায় এলসি চালু করার দুই মাস পর বন্দরে পণ্য পৌঁছানোর পর দেখা গেলো খোলা বাজারে ডলারের চলতি দর ১২০ টাকা। তখন কাগজে কলমে ১১৪ টাকা হলেও পরিশোধ করতে হচ্ছে ১২০ টাকা করে।”
আমদানির সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এসব কারণে কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে গেছেন যার ফলে কাঁচামাল সংকট দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে চিনির বড় আকারের একটি এলসি খুলতে (৫৫ থেকে ৫৮ হাজার টন) গড়পড়তায় ৫০০ কোটি টাকা বা তিন কোটি ৭৫ লাখ ডলারের প্রয়োজন হয়।
‘চোরাচালান’ বন্ধ ও দাম বাড়ানোর আবেদন
ভারতের বাজারে বর্তমানে এক কেজি চিনির মূল্য ৩৯ থেকে ৪৫ রুপির মধ্যে যা বাংলাদেশের বাজারমূল্যের অর্ধেক। কিন্তু দেশটি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখায় আমদানি করা যাচ্ছে না।
তবে দামের বিশাল এই অসমতার কারণে চোরাই পথে কিছু চিনি বাংলাদেশে ঢুকছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি ভারত থেকে চোরাই পথে আসা চিনির কারবার বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
পাশাপাশি ডলার ও আন্তর্জাতিক মূল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন করে প্রতিকেজি চিনির দর ১৪৫ টাকা নির্ধারণের একটি আবেদনও জমা দিয়েছে তারা।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আরও পড়ুন:
সিঙ্গাপুর থেকে টিসিবি চিনি কিনছে ৫১ টাকা কেজি দরে
সরকারকে পাত্তা দিল না চিনি ব্যবসায়ীরা, ‘ভয়ে’ সাবধানী ভোক্তা অধিদপ্তর
বিশ্ববাজার থেকে আরও কমে চিনি কিনছে সরকার