বিশ্ববাজার থেকে আরও কমে চিনি কিনছে সরকার

এ দর দেশের খুচরা বাজারের চেয়ে কেজিতে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত কম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2023, 03:14 PM
Updated : 3 May 2023, 03:14 PM

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির জন্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আগের চেয়ে কিছুটা কমে চিনি কিনছে সরকার; এ দর দেশের খুচরা বাজারের চেয়ে কেজিতে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কম।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি কেনার একটি আন্তর্জাতিক ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই কেনাকাটার দর বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে টিসিবির জন্য ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি কেনার একটি আন্তর্জাতিক প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট খরচ হচ্ছে ৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতিকেজি চিনির দাম পড়ছে ৮২ দশমিক ৮৯ টাকা। আগের কেনাকাটায় এ দাম ছিল ৮৮ দশমিক ৭৪ টাকা।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলভিত্তিক কোম্পানি স্মার্টটেক ইনফরমেশন টেকনোলজি লিমিটেড চিনি সরবরাহের কাজটি পেয়েছে বলে জানান তিনি।

রোজার মাঝামাঝি সময়ে গত ৭ এপ্রিল চিনির দাম কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে নতুন দর বেঁধে দেয় সরকার। তখন প্রতিকেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১০৪ টাকা ও প্যাকেট চিনি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

দাম কমিয়ে রাখতে চিনি আমদানিতে অধিকাংশ শুল্ক প্রত্যাহার কিংবা কমিয়ে আনা হয়েছিল আগেই। এরপর এপ্রিলের শুরুতে চিনির দাম কমানোর ঘোষণা আসে সরকারের পক্ষ থেকে।

তবে খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দরের সঙ্গে মিল নেই। বুধবার ঢাকার বিভিন্ন মুদি দোকানে খুচরায় প্রতিকেজি খোলা চিনি ১৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ানোর কথা তুলে ধরে দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়ানোর কথা বলে আসছিল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো।

সার কিনতেও অর্থ সাশ্রয়

এদিনের বৈঠকে শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আসা সার কেনার আটটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের তুলনায় কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে কেনার সুযোগ পাওয়ার তথ্য দেখা গেছে।

এদফায় ৯০ হাজার টন ইউরিয়া, ৫৫ হাজার টন টিএসপি, ৫০ হাজার টন এমওপি ও ৪০ হাজার টন ডিএপি সার কেনা হচ্ছে।

কমিটি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) চট্টগ্রামের ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানির জন্য ১৮৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় ৩০ হাজার টন ফসফরিক এসিড কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সান ইন্টারন্যাশনাল তা সরবরাহ করছে। আগের কেনাকাটায় প্রতিটন ফসফরিক এসিডের দাম ৬৭৪ ডলার থাকলেও এবার পড়ছে প্রতিটন ৫৭২ ডলার।

বিসিআইসির জন্য কাতার কেমিক্যাল অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (মুনতাজাত) ৯৫ কোটি ৩২ লাখ টাকায় ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিটনের দাম দাঁড়াচ্ছে ২৯৫ দশমিক ৩৩ ডলার, যা আগে ছিল ৩০৮ দশমিক ৬৭ ডলার।

এদিন বিসিআইসির জন্য কাফকোর কাছ থেকে ১০৫ কোটি ১৪ লাখ ২৩ হাজার ২৭৫ টাকায় ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি টনের দাম দাঁড়াচ্ছে ৩২৫ দশমিক ৭৫ ডলার, যা আগের কেনাকাটায় ছিল ৩০৯ দশমিক ২৫ ডলার।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) জন্য সৌদি আরবের মাদেন এর কাছ থেকে ২৩৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকায় ৪০ হাজার টন ডিএপি সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটনের দাম পড়ছে ৫৫৪ দশমিক ২৫ ডলার, যা আগের কেনাকাটায় ছিল ৫৯৯ দশমিক ৭৫ ডলার।

একই সংস্থার জন্য আরেক প্রস্তাবে কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কাউন্সিলের কাছ থেকে ২২৬ কোটি টাকায় ৫০ হাজার টন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিটনের দাম পড়েছে ৪২০ দশমিক ৩৮ ডলার, যা আগের কেনাকাটায় ছিল ৪৪৪ দশমিক ১৩ ডলার।

বিএডিসির জন্য জিসিটি তিউনিশিয়ার কাছ থেকে ১০৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় ২৫ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি টনের দাম পড়বে ৩৯৩ ডলার, যা কিনতে একসময় ৯৮৯ ডলার পর্যন্তও খরচ করতে হয়েছিল।

একই সংস্থার জন্য মরক্কোর ওসিপি এসএর কাছ থেকে ১৩২ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিটনের দাম পড়ছে ৪১১ ডালার, যা আগের কেনাকাটায় ছিল ৪৮০ ডলার।

বৈঠকে টেবিলে উত্থাপনের মাধ্যমে সাবিক এগ্রি সৌদি আরব থেকে ১০৫ কোটি টাকায় ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি টনের দাম পড়ছে ৩২৫ দশমিক ৩৩ ডলার।