রোজায় চাহিদা বাড়ে, এমন প্রায় সব পণ্যের দাম চড়তে শুরু করে দিয়েছে। মাংসের চড়া দামে ক্রেতা কমে গেছে বলে বিক্রেতাদের ভাষ্য।
দফায় দফায় দাম বেড়ে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকায়।
চড়া দামের কারণে খরচ একই রেখে কেনাকাটা বা ভোগের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন ক্রেতাদের অনেকে। কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. হাসান বলেন, “যে জায়গায় আগে ১০টা মুরগি নিত, এখন পাঁচটা নেয়। দাম বেশি তাই।”
কারওয়ানবাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি হলেও মিরপুরের কাজীপাড়ায় বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকায়। বাড়তি দামের কারণে কমেছে ক্রেতাও।
কারওয়ানবাজারে গরুর মাংস ব্যবসায়ী মো. এনামুল হক বলেন, “৭৫০ টাকায় এক কেজি কিনে খাওয়া লাগে। অনেকের খাইতে মন চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।
“গোস্ত খাইতে এখন হাজার টাকার নোট লাগে, কিন্তু কামাইতে লাগে তিন দিন, এত দামে কি আর মানুষ খাইতে পারে?”
বেশি কমেছে খাসির মাংসের ক্রেতা। কেজি প্রতি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
বিক্রেতা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, “শবে বরাতের রাতে এমনিতে ৫০-৬০টা খাসি বিক্রি করতাম, এবার ১০-১২টা বিক্রি করতে কষ্ট হয়া গেছে। আগে যেখানে ২০-২৫টা খাসি বিক্রি করতাম, এখন পাঁচ-ছয়টা বিক্রি করতে কষ্ট হয়া যায়।”
গরম বাজার আরও গরম
ছোলা, বুট, ডাল, বেসন কিনতেও লাগছে বাড়তি টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, ডলার সংকটে এলসি কম খোলায় বাজারে সরবরাহ কম। ফলে দাম বাড়তি।
রোজায় দাম বেড়ে যাবে এমন ধারণা থেকে আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে ফেলতে শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন এমদাদুল হক।
হতাশ তিনি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে দুই-আড়াইহাজার টাকার মাছ-মাংস কিনলে মাস যেত। এখন একই টাকায় ১৫ দিনও যায় না। শুধু মাছ মাংস না, সবকিছুর দাম বেশি। রমজান আসছে, আরও বাড়ছে।”
রাজধানীর এই পাইকারি বাজারে খুচরাতেও বিক্রি হয় পণ্য। কিছুটা কমে মেলে বলে ছুটির দিন থাকে ক্রেতাদের ভিড়। এমদাদুলের মত সবাইকেই গুনতে হয়েছে বাড়তি অর্থ।
গত সপ্তাহে যে ছোলা পাওয়া গেছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়, তার দাম এখন ৯০ থেকে ১০০। পাঁচ টাকা বেড়ে ছোলা বুটের দাম ৯০ থেকে ৯৫, কেজিতে ১০ টাকা দাম বেড়েছে অ্যাঙ্কর ডালের কেজি এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।
মিরপুর ও মহাখালীর বাজারে গত সপ্তাহে বেসন কেজিতে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে শুক্রবার কারওয়ান বাজারে ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বছলে, এক মাসে ছোলার দাম প্রায় ৬ শতাংশ এবং এক বছরে বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এক বছরে অ্যাঙ্কর ডালের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ।
বেগুনের কদর আগেভাগেই
রোজা মানেই বেগুনের দরে যে লাফ, সেটি দেখা গেছে আগেভাগেই।
মিরপুরের কাজীপাড়া বাজারে গোল বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। লম্বা বেগুনের দাম ৫০ থেকে ৭০। সরবরাহ ভালো থাকলেও শসার দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ১২০ টাকার কমে মিলছে না কাঁচামরিচ।
সরকারও বেঁধে দিয়েছে দামে মিলছে না চিনি আর খোলা তেল।
প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম ১১৭ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।
আবার ১৬৭ টাকায় বেঁধে দেওয়া খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়।
খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১২ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে প্যাকেট চিনি বাজারে খুঁজে পাওয়াই ভার।
পেঁয়াজের দাম এতদিন না বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।
আরও পড়ুন-