জোগান ঠিক থাকলে দামও চড়বে না, বললেন খুচরা ব্যবসায়ীরা

রোজায় বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময় সভায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এসেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2023, 12:28 PM
Updated : 26 Feb 2023, 12:28 PM

রোজায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে পণ্যের নির্বিঘ্ন সরবরাহের নিশ্চয়তা চেয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে এই নিশ্চয়তা চান তারা।

খুচরা বাজারে অভিযান না চালিয়ে পণ্যের পাইকারি বাজার ও আমদানি পর্যায়ে নজর দিতে ভোক্তা অধিদপ্তরকে তারা পরামর্শ দিয়েছেন।

আসন্ন রোজা উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী এলাকার খুচরা দোকানি, পাইকারি বিক্রেতা ও ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে রোববার কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবনে এই সভা হয়।

সভায় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “যেই মজুদ আছে তাতে রোজার মাস নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা থাকার কথা না। তবুও গণমাধ্যমগুলো পূর্বাভাস দিচ্ছে এবার দাম বাড়তে পারে। সেই আতঙ্ক থেকে আজকের অনুষ্ঠান।”

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশেও দাম বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আজকে ডলারের দাম বাড়লে কালই যেন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া না হয়।

রোজা বা অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব এলে বিভিন্ন দেশে পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে বাড়ার দিকটি দেখিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সেটা চাই না। অন্তত দামটা যেন না বাড়ে, সেটাই হোক এবারের লক্ষ্য।”

গত বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জসিম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেন দামটা যথা সময়ে সমন্বয় করে।

“গত বছর রোজার সময় তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করে রাখা হয়েছিল। ঈদের পরে দেখা গেল বাজারে তেল নেই, সেই সুযোগে দাম অনেক বেড়ে গেছে। রোজার মধ্যে দামটা বাড়িয়ে রাখলে এই পরিস্থিতি হত না। আমরা ড্রাইভ দিতে চাই। আমরা দেখাইতে চাই, রোজা আসলে আর দাম বাড়ছে না।”

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, “নিত্যপণ্যের ছয়টি আইটেম, চিনি, তেল, খেজুর, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ- এগুলোর দায়িত্ব ব্যবসায়ীরা নেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটা দায়িত্ব নিতে হবে। সেটা হচ্ছে এই সময়ের মধ্যে ডলারের দাম বাড়বে না, এই নিশ্চয়তা দেওয়া।

“যত রকম সমস্যা, সব খুচরা ব্যবসায়ীদের উপর আসে। সরকার যেন আমাদের এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। খুচরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমরা মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখব।”

মোট ১৬৯ জন খুচরা ব্যবসায়ী ও বাজার কমিটির নেতাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান হয়।

নিউ মার্কেট বনলতা কাঁচা বাজারের সদস্য সচিব বলেন, “চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার মৌলভীবাজার এলাকায় আমদানি পর্যায়ে কীভাবে দাম ঠিক করা হয়, সেই দিকে নজর দিতে হবে। সেই অনুযায়ী সারা বছরও যদি দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলে, আমাদের আপত্তি নেই।”

বনশ্রী কাঁচা বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া ইসলাম বলেন, “খুচরা বাজারে অভিযান না করে পাইকারি ও উৎপাদন পর্যায়ে অভিযান করেন। সরবরাহ নিশ্চিত করেন। তাহলে আমার বিশ্বাস পণ্যের দাম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।”

আরেকজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, “ভোজ্যতেল, চিনির মূল সরবরাহকারী যারা, তাদের কাছে আমরা জানতে চাই যে, আসন্ন রমজানে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে কি না? সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম বাড়বে না, এই গ্যারান্টি আমরা দিতে পারি।”

তার পরিবর্তে খুচরা বাজারে অভিযানের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “পাইকারিতে দাম বাড়িয়ে দিয়ে, সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে আমাদের উপর জেল-জরিমানা যাতে চাপিয়ে দেওয়া না হয়, এটাই আমাদের দাবি।”

ঢাকার বড় পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, তারা তা বাস্তবায়ন তারা সহযোগিতা করবেন।

ভোজ্যতেল অ্যাসোসিয়েশন ও চিনি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এস আলম গ্রুপের কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ বাজারে অস্থিরতার জন্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের দায়ী করেন।

তিনি বলেন, “এখন আমদের স্টকে যে তেল আছে, তার কেনা মূল্য প্রতি টন ১৮০০ ডলার থেকে ১৯০০ ডলার। কিন্তু বাজারে যে দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, সেটা ১৪০০ ডলার বিবেচনায়। তবুও আমরা সরকারি নির্ধারিত মূল্যের তেল সরবরাহ করে যাচ্ছি।

“তবুও গ্যাসের কারণে, এলসি আসতে বিলম্বের কারণে হয়ত একটু ১৯/২০ হয়। আর সেকারণে বাজারে একটা ঘাটতি দেখা দেয়। সরবরাহ সিস্টেমে একটু গ্যাপ হয়ে গেলে তখন বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।”

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, “খুচরা ব্যবসায়ীরা রিফাইনারির ওপর দোষ দিয়েছে। আবার রিফাইনারি বলছে তারা সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছে। আসলে এখানে শুধু ব্লেইম গেইম হচ্ছে।

“এবার কেবল খুচরা বাজারে যাব না। যেই বাজারে সমস্যা হবে, সেই বাজারের কমিটিকে দায়বদ্ধ করা হবে। তাদের কমিটি ভেঙে দিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবে।”

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ব্লেইম করছে। নিশ্চয় এর মধ্যে কেউ সুযোগ নিচ্ছে।।”

আগামী তিন মাসের জন্য পণ্যের ও উৎপাদনের কোনো ঘাটতি নেই বলে বিভিন্ন সমীক্ষার বরাত দিয়ে বলেন সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, এবার ৬৪ জেলায় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। সরকারি মনিটরিংয়ের পাশাপাশি এফবিসিসিআই, দোকান মালিক সমিতি এবার বাজার তদারক করবে।

বাণিজ্য সচিব তপন ঘোষ ব্যবসায়ীদের নাগরিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “প্রত্যেক মানুষকে আলাদা আলাদা ভাবে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। সরকার শুধু পলিসি ও গাইডলাইন ঠিক করে দেবে। কাউকে শাস্তি দেওয়া রেগুলেটরি অথরিটির উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু অনেক সময় করতে হয়।”