হঠাৎ লাফে ‘ডাবল' সেঞ্চুরির পথে ব্রয়লার মুরগি

ডিমের দামও গিয়ে ঠেকেছে ডজন ১৪০ টাকায়।

শাহরিয়ার নোবেলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2023, 03:25 PM
Updated : 3 Feb 2023, 03:25 PM

তিন দিন আগেও দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি, সেই ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে। আর একটু বাড়লেই ছুঁয়ে ফেলবে দুই শর ঘর।

আমিষের ‘স্বস্তা’ উৎসটি দামি হয়ে উঠেছে আগেই। এবার তা নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে যাচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, খামার থেকে আড়তে সরবরাহ কমে গেছে। খামারিদের নেতারা বলছেন, খাবারের দাম বাড়ায় সামনে আরও বাড়তে পারে দাম।

মুরগির পাশাপাশি লাফ দিয়েছে ডিমের দামও। লাল ডিমের ডজন দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে গেছে ১৫ টাকার মত।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ছুটির দিনে মুরগি নিতে এসে এই দাম দেখে ভীষণ হতাশ বর্ষণ ও আব্দুল্লাহ নামে দুই শিক্ষার্থী। ১৫০ টাকা দাম হবে ভেবে বাজারে এসে দাম দেখেছেন ১৮০ টাকা। বর্ষণ বলেন, “বাসায় গিয়ে বোঝাতে ঝামেলা হবে।“

কারওয়ান বাজারে আসা মুরসালিন আহমেদ বললেন, “দাম তো আগে থেকেই বাড়তি। এখন রমজান মাস টার্গেট করে তারা একেকটা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ছোলা-ডাল এসবের দাম বাড়াল, মাঝে মসলা-মরিচের দাম বেড়েছে, এখন আবার মাংস, ডিম এগুলোর দাম বাড়ছে।”

দাম বাড়ল কবে- এমন প্রশ্নে কাজীপাড়া বাজারের বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, “কবে বাড়ছে ডেইট মনে নাই। তিন দিন আগে আছিল ১৫০-১৬০। রাইতে গাড়ি আহে, যে রেইটে মুরগি দেয় সেই রেইটে বেচি। দাম বাড়ে না কমে এই হিসাব আমাগো না।”

মুরগির দাম বাড়ার পেছনে একটা ব্যাখ্যা জানালেন কাপ্তান বাজারের পাইকার আকরাম হোসেন। তিনি বললেন, “এখন ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা, খাবার, ওষুধ সবকিছুর দাম বেশি। যে কারণে খামারিরা শেডে মুরগির বাচ্চা তুলছে না। খামারিদের আশঙ্কা, যে টাকা তারা খামারে মুরগির পেছনে দেবেন, সে টাকা বাজার পড়তির দিকে থাকলে আর উঠে আসবে না। যে কারণে বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়ে ব্রয়লারের দাম বাড়ছে।“

সোনালি মুরগির দাম কেজিতে আরও একশ টাকা বেশি। ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা দরেই বিক্রি হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। ডিম পাড়া শেষ হলে কেজিদরে বিক্রি করে দেয়া লেয়ারের সরবরাহও কমে গেছে বলে জানালেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম।

বেড়েছে গরু-খাসির মাংসের দামও। কারওয়ান বাজার ও মিরপুরের দুটি বাজারে গরুর মাংস ২০ থেকে ৫০ টাকা এবং খাসির মাংসের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশিতে বিক্রি হয়েছে।

প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ১ হাজার টাকা।

মাংস ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মার্কেট তো ওপেন। দামের এই উঠানামা দীর্ঘদিন ধরেই আছে। দাম সাধারণত আমাদের মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ বা নির্ধারণ করে না। এখন পর্যন্ত মুরগি-ডিম-মাংসের দাম নির্ধারণের ব্যাপারে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সপ্তাহের কার্যদিবস শুরু হলে, হয়তো আমরা বসব, আলোচনা করব।“

মিরপুরের শাহ আলী বাজারে মাসের বাজার কিনতে আসা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে আমরা তো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। সংসার চালানোই কঠিন। এখন চাইলেই বাচ্চাকে নিয়ে একদিন বাইরে খেতে যেতে বা শপিং করতে যাওয়া যায় না। আমাদের আয় তো আর বাড়েনি।“

ডিমের বাজারের হালচাল

গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ডিমের ডজন ১০০ টাকার নিচ থেকে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে উঠে যায় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত। তবে শীতের আগে আগে দাম কমতে কমতে ১২০ টাকার নিচে নামে। সপ্তাহ দুয়েক ধরে এই দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী।

কারওয়ান বাজার, মিরপুর শাহ আলী বাজারে ১৩৫ টাকা ডজনের ডিম মিললেও, ছোট বাজার ও গলির দোকানে গুনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা।

ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এর আগে ডিম আমদানির ঘোষণায় দাম কমেছিল। কিন্তু আমদানি করা হবে না, এই কথা জানানোর পর আবার বাড়ছে। ভোক্তারা ডিম খাওয়া কমিয়ে দেওয়ায় দাম কমেছিল, কিন্তু আবার ভোক্তারা ফেরায় তারা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

ডিম-মুরগির এই বাড়তি দাম সামনের দিনে কমার সম্ভাবনা দেখছেন না পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসীন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণের অস্বাভাবিক দামের কারণে পোলট্রি খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদি খাদ্যের দাম না কমে আর এভেইলেবল না হয়, তাহলে সামনেও দাম কমার সম্ভাবনা কম।“

বেঁধে দেয়া দরে চিনি নেই

বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১০৭ টাকা আর প্যাকেটজাত চিনির দাম ১১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।

তবে খুচরা বাজারে খোলা চিনি ১১৫ টাকার কমে বিক্রি হতে দেখা যায়নি কোনো বাজারেই। বিক্রেতারা বলছেন, ‘বাজারে চিনিই নেই।’

বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশিতে চিনি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “আমরা আমাদের মনিটরিং চালাচ্ছি। চিনির নতুন দাম যেটা এসেছে তা বাজারে কার্যকর হচ্ছে কি না দেখছি। এখন রমজান সামনে রেখে অনেক মহল অতি মুনাফার চিন্তা করবে, বাজার অস্থির করবে। এদের ব্যাপারে আমাদের কঠোর অবস্থান আছে। কেউ যদি কোথাও মজুদ করে বা অন্যকিছু করে দাম বাড়াতে চায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।“

আদা রসুনের দামও বাড়তি

বছরের শুরুতে হুট করে বেড়ে যাওয়া আমদানিকৃত আদা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়, আমদানি করা রসুনের কেজি ঠেকছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

দেশি আদা-রসুন অবশ্য কিছুটা কম দামে মিলছে। প্রতি কেজি আদা মানভেদে ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। রসুনের দর ছিল ১৫০-১৮০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের আদা-রসুন বিক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ার ব্যাপারে তাদের কোনো হাত নেই।

এই বাজারের বিক্রেতা মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, “শ্যামবাজারে গিয়ে খুবই অল্প মাল পাওয়া যাচ্ছে। ডলারের ক্রাইসিসে বিদেশ থেকে আদা-রসুন আসছে না।”

এই প্রভাব পড়েছে শুকনা মরিচের বাজারেও। গত সপ্তাহে জাতভেদে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া শুকনা মরিচ এ সপ্তাহে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ছুঁয়েছে।