চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা যাচ্ছে না। দেশি পেঁয়াজের মোকাম থেকে বেশি সংগ্রহের চেষ্টায় ব্যবসায়ীরা।
Published : 12 Aug 2023, 11:48 PM
এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দর কেজিপ্রতি ২০ টাকা, কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি বেড়ে গেছে।
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দর ঠেকেছে ৬০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহেও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকায় পাওয়া গেছে, দেশির দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকার ভেতর।
শনিবার ঢাকার মিরপুর ও মহাখালীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পেঁয়াজ আমদানিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল অনেকটা, সেই পণ্যের দামে হঠাৎ অস্থিরতার কারণ হিসেবে এক পাইকারি ব্যবসায়ী ভারতে টানা বৃষ্টির কথা বলেছেন।
তিনি জানাচ্ছেন, এখন চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা যাচ্ছে না। কারণ, ভারতেই এখন সংকট।
মিরপুরের সোনারবাংলা কাঁচাবাজারের মোহাম্মদিয়া স্টোরের বিক্রেতা মো. মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে খুচরা পর্যায়েও তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
মিরপুর সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ফেরদৌস আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার বাচ্চার জন্মদিন। আর্থিক চাপের মধ্যেও স্ত্রীর অনুরোধে কয়েকজনের খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করছি। বাজারে এসে দেখি প্রায় সব পণ্যের দাম বেশি। আশ্চর্য হয়েছি পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা শুনে। শেষ পর্যন্ত ৫৫ টাকা করে ভারতীয় পেঁয়াজ নিয়ে যাচ্ছি। অথচ আমি কোনো দিন ভারতীয় পেঁয়াজ কিনিনি।”
তিনি বলেন, “আমি যে বেতন পাই তা দিয়ে এখন কোনোভাবেই মাস শেষ করতে পারছি না। অথচ দুই বছর আগে মাসে অন্তত ৫ হাজার টাকা সঞ্চয় করতে পারতাম। তখন আমি নিজেকে মধ্যবিত্ত মনে করতাম। এখন আমি নিজেকে নিম্মবিত্ত বলতে বাধ্য হচ্ছি।”
কেন এভাবে দাম বাড়ল, সেই প্রশ্নে একটি ব্যাখ্যা দিলেন মিরপুর শাহ স্মৃতি মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ভারতে টানা বৃষ্টি হওয়ার ফলে দেশটিতে পেঁয়াজের সংকট তৈরি হওয়ার আভাস দিচ্ছেন সে দেশের ব্যবসায়ীরা। এর ফলে আমরা যতদ্রুত সম্ভব কিছুটা বেশি পেঁয়াজ আনতে বেশি এলসি করতে চাচ্ছি। কিন্তু তারা উল্টো আগের চেয়ে কম পেঁয়াজ পাঠাচ্ছেন।
“শুক্রবার রাতে আসা ভারতের নাসিক পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। আর নিম্ন মানের একটা পেঁয়াজ আসে, ওইটা বিক্রি করছি ৪৬ টাকায়। গত সপ্তাহে এসব পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি।”
এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাকে জানিয়েছেন, সে দেশের ভেলেরো সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় এবং সেগুলোর জাতও ভালো। এবার ওই এলাকায় বন্যা হওয়ায় তাদের পেঁয়াজের মজুদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারে।
নিজ দেশের সংকট এড়াতে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে বলে সে দেশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানতে পারার কথা জানিয়েছেন মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, “ভারত থেকে পেঁয়াজ কম পাওয়ায় আমরা দেশি পেঁয়াজের মোকাম, বিশেষ করে পাবনা, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহের চেষ্টা করছি।
“আমরা মতো অন্য ব্যবসায়ীরাও দেশি পেঁয়াজ কিনতে যাওয়ায় সেসব মোকাম পেয়াঁজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।”
দেশি পেঁয়াজের মজুদ পরিস্থিতিও খুব ভালো নয় বলেও তার ধারণার কথা জানান তিনি।
ঢাকার শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়তদার সমিতির সভাপতি হাজি মো. সাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শ্যমবাজার পাইকারি বাজারেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
“ভারত থেকে পেঁয়াজ পাঠানোর গতি অনেক কমে গেছে। যত দ্রুত পারা যায় ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে আনার চেষ্টা করছি আমরা। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের কারণে এলসি দিতে পারছে না।”
দর ১০০ টাকা ছোঁয়ার পর পেঁয়াজ আমদানিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সায়
বেলায় বেলায় বেড়ে সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে পেঁয়াজ; আমদানির সিদ্ধান্ত কাজে দেবে?