‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার বলেন, “শ্রমিকদের মজুরি দিন, যাতে তারা বেঁচে থাকতে পারে।”
Published : 10 Nov 2023, 02:51 PM
‘রাজনৈতিক প্রলেপ দিয়ে’ পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনরত শ্রমিক সংগঠনগুলোর একটি জোট ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন’।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক শ্রমিক সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার বলেন, “সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিবেচনা করুন।”
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান গত ৮ নভেম্বর তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করেন। শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন তা প্রত্যাখ্যান করে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার করার দাবিতে আন্দোলন করছে।
গত কয়েক দিন ধরে গাজীপুর, সাভার ও ঢাকার গার্মেন্ট কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শ্রমিক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ইংগিত দিয়েছেন কারখানা মালিকরা। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই শ্রমিক অসন্তোষ থেকে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
সেই প্রসঙ্গ ধরে তাসলিমা আখতার বলেন, “কারখানা বন্ধ করে দেবেন, শ্রমিকদের ছাঁটাই করবেন, কারাখানায় চাকরি দেওয়া হবে না… নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলছেন, এই মজুরি মেনে নিতে হবে।
“আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, শ্রমিকদের মজুরি দিন, যাতে তারা বেঁচে থাকতে পারে। আজকে শ্রমিকদের যে আন্দোলন, তার মধ্যে রাজনৈতিক প্রলেপ দিয়ে এই ন্যায্য দাবিকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই।”
সাড়ে ১২ হাজার টাকার ন্যূনতম মজুরি কেন গ্রহণযোগ্য নয়, তা ব্যাখ্যা করে ১৫টি শ্রমিক সংগঠনের জোটের নেত্রী তাসলিমা বলেন, “আমরা এক বছর ধরে ২৫ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণার আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে লক্ষ্য করলাম, মজুরি বোর্ড, সরকার যে মজুরি ঘোষণা করেছে তা আমাদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে না। আমরা যে মজুরি দাবি করেছি, সেই মজুরির ধারেকাছেও সরকারের সেই ১২ হাজার ৫০০ টাকা আসে না।
“মজুরি বোর্ড বলছে, ৫৬% মজুরি বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু আমরা যদি বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দেখি, তাহলে সেটা ৩৯% হয়। তার থেকে মুদ্রাস্ফীতি হিসাব করলে… পেঁয়াজের দাম কত, আলুর দাম কত, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম যেই জায়গায় পৌঁছেছে, ১২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের পক্ষে কোনোভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব না। তাই আমরা ১২ হাজার ৫০০ টাকার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছি।”
তাসলিমা বলেন, “আমরা সরকারকে আহ্বান করি, এখনো সময় আছে। ১৪ দিনের মধ্যে যে গেজেট হয়, সেই গেজেট এখনো হয়নি। আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি। আমরা আশা করি, মজুরি পুনর্বিবেচনা করে শ্রমিকদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করবে সরকার।”
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ ১৫টি শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই শ্রমিক সমাবেশে যোগ দেয়। তাদের হাতে হাতে ছিল লাল পতাকা ও প্ল্যাকার্ড। ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা কর’, ‘দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ২৫ হাজার টাকা চাই’, ‘স্টপ আরএমজি ওয়ার্কার কিলিং, ‘আঞ্জুয়ারা-রাসেল-ইমরান আমরা তোমাদের ভুলব না’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা ছিল সেসব প্ল্যাকার্ডে।
মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে গাজীপুরে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে গত কয়েক দিনে। সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ গেছে পোশাক শ্রমিক আঞ্জয়ারা, রাসেল ও ইমরানের। সমাবেশ থেকে তাদের ‘হত্যার’ বিচার দাবি করা হয়।
অন্যদের মধ্যে শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ, মাহবুবুর রহমান ইজরাইল, জলি তালুকদার, শাহ আলম, শহিদুল ইসলাম সবুজ, তফাজ্জল হোসেন, মাসুদ রেজা, ইয়াসিন মিয়া বক্তব্য দেন সমাবেশে।
‘জি-স্কপের সমাবেশ’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন’ এর সমাবেশের পাশেই আরেকটি সংগঠন গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্বপ) মজুরি ২৫ হাজার টাকার দাবিতে সমাবেশ করে।
পরিষদের সমন্বয়ক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, “গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের মজুরি আন্দোলনে মাঠে রয়েছে। এটা কোনো ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমরা কোনো ধরনের জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর-অবরোধের সাথে যুক্ত নই। আমরা শুধুমাত্র আমাদের জীবন ধারণের মজুরির জন্য লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি।
“কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, যখন আমরা রুটি-রুজির প্রশ্নে লড়াই করি, সংগ্রাম করি, তখনই আমাদের শ্রমিকদের হত্যা করা হয়, আমাকে আহত করা, আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়, আমাকে তুলে নেওয়া হয়।”
আবদুল ওয়াহেদ বলেন, “আমরা গার্মেন্ট শ্রমিকরা আজকে ৪০ বছর যাবত এই মালিকদের দাসত্ব করছি। যখন যে সরকার আসছে, তাদের দাসত্ব করছে। আজকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে, মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে সেই বেতন নিয়ে চলতে হবে। না হলে বাড়ি চলে যেতে হবে।তার মানে তাদের দাস। আমাদেরকে দাস করে রাখা হয়েছে, দাস করে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলেন, আমাদের সরকার নাকি শ্রমবান্ধব, শ্রমিকবান্ধব। আমরা এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, কারো শ্রমবান্ধব হওয়ার দরকার নাই, কারো শ্রমিকবান্ধব হওয়ার দরকার নাই। আমি আমার জীবনধারণের জন্য ২৫ হাজার টাকা চাই, যা দিয়ে আমি আমার পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে পারব। আজকে যে মজুরি ঘোষিত হয়েছে, এটা কোনোভাবে শ্রমিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এই মজুরির ঘোষণা প্রত্যাহার করতে হবে।”
পুরনো খবর
কঠোর হচ্ছেন পোশাক কারখানা মালিকরা, নিয়োগ বন্ধ
যে বেতন বাড়ানো হয়েছে, তা নিয়েই কাজ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণের দাবি নব্বইয়ের ছাত্রনেতাদের
নতুন কাঠামোয় বেতন আসবে ‘১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা’: বাণিজ্যমন্ত্রী
৫৬.২৫% বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ