নতুন বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকদের যে আন্দোলন চলছে, তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বৃহস্পতিবার পোশাক শিল্প মালিকদের এক সমন্বয় সভায় সব কারখানায় নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখা, কারখানায় ভাংচুর হলে প্রয়োজনে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে গঠিত মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা ধরে মোট ৫টি গ্রেডে মজুরি প্রস্তাব করে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। পরে সেই প্রস্তাবই গ্রহণ করা হয়।
তবে তা প্রত্যাখ্যান করে সাভার, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা মজুরি দাবি করা শ্রমিক সংগঠনগুলো।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে অন্তত চারজন শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর এসেছে। বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ হয়েছে। আন্দোলনের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক কারখানা।
এমন পরিস্থিতিতে উত্তরায় বিজিএমএই ভবনে দফায় দফায় বৈঠক করছেন শিল্প মালিকরা।
এর ধারাবাহিকতায় বিজিএমইএ এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, অর্ডার কমে যাওয়া এবং সম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ, কারখানার কাজ বন্ধ, শ্রমিক-কর্মচারীদের মারধর, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, মালামাল লুটপাট– ইত্যাদি ‘জটিল পরিস্থিতির’ কারণে বৃহস্পতিবার বিজিএমইএতে পোশাক শিল্প মালিকদের সমন্বয় সভা হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান (কচি) সহ পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত সব পোশাক শিল্প কারখানাতে সব ধরনের নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকবে। প্রতিটি কারখানার গেইটে ‘নিয়োগ বন্ধ’ কথাটি লিখে ব্যানার টাঙিয়ে দিতে হবে।
>> যেসব কারখানায় অগ্নি-সংযোগ, ভাংচুর বা মারামারির ঘটনা ঘটেছে, সেসব কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিকটস্থ থানায় ছবি ও ভিডিওসহ মামলা করতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম জানা না থাকলে ‘অজ্ঞাতনামা’ উল্লেখ করে মামলা করা যাবে।
>> যেসব কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজ করা থেকে বিরত থাকবে বা কারখানা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে, সেসব কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বন্ধ করে দিতে হবে।
>> যেসব কারখানায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও মারামারি হয়েছে, সেসব ঘটনার ছবি ও ভিডিও বিজিএমএইর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে।
অর্ধেক কারখানায় ‘ক্রয়াদেশ নেই’
এদিকে কারখানা মালিকদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় বিজিএমইএ সভাপতি দাবি করেন, বিগত ৪০ বছরে ৬৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ এর সদস্যপদ গ্রহণ করলেও ৩৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
অবশিষ্ট ২৯২১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২৩৩৯টি কারখানা বিজিএমইএতে তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেছে। এই ২৩৩৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে মাত্র ১৬০০টি সদস্য কারখানা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার এনে কাজ করছে।
“বাদ বাকি কারখানাগুলোর মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ কারখানা বিভিন্ন ব্যাংক দেনা ও দায়ের কারণে সরাসরি ব্যাক-টু-ব্যাক খুলতে পারছে না। ফলে তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার নিতে পারছে না। এই সদস্য কারখানাগুলো মূলত সাব-কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে,” বলেন ফারুক হাসান।
গত কয়েক বছরে কারখানা বন্ধের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধুমাত্র মহামারীর কারণে ২০২০-২১ সালে ৩১৭টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। পরে অন্যান্য কারণে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে না পেরে ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের বাজারগুলোতে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে বলেও বিজিএমএই সভাপতির ভাষ্য।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন এই খাতের জন্য ‘নতুন একটি চ্যালেঞ্জ’ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন ।