শ্রমিকদের দাবি নিয়ে টিপু মুনশি বলেন, “যদি ২০ হাজার টাকা করে পেত তখন খুশি হত। কিন্তু তখন সব গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া লাগত।”
Published : 08 Nov 2023, 07:40 PM
তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম যে মজুরি ঘোষণা হয়েছে, মাস শেষে তার চেয়ে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা বেশি পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বিক্ষোভের মধ্যে এই মজুরিকে ‘যথেষ্ট ন্যায়সঙ্গত’ বলেও মূল্যায়ন করেছেন।
তিনি দাবি করছেন, “একজন শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা হলে সেটা দিন শেষে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা হয়ে যায়।”
এই বাড়তি টাকা আসবে ওভারটাইম হিসেবে। এবার মজুরি কাঠামোয় মূল বেতনের অংশ আগের বছরের চেয়ে বেশি ধরায় ওভারটাইম বেশি আসবে বলেও জানান মন্ত্রী।
তার দাবি, শ্রমিকরা যে দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন, সেই দাবি মানলে দেশের সব কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে।
বুধবার সচিবালয়ে ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি মনিটরিং ও রিভিউ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন টিপু মুনশি, যিনি এক সময় তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তবে মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি সরাসরি এই ব্যবসায় যুক্ত নেই। তার স্বজনরা দেখেন সেই ব্যবসা।
এ সময় দ্রব্যমূল্যের পাশাপাশি পোশাক শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে এক প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি ২০ হাজার টাকা করে পেত তখন খুশি হত। কিন্তু তখন সব গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া লাগত। একটা জায়গায় আসতে হবে যেখানে দুই পক্ষেই লাভবান হয়।
“দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতি বিচেনায় নিয়ে যে হারে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে, তারা শ্রমিকরা খুশিই হয়েছেন। পাশাপাশি নতুন এই মজুরি যথেষ্ট ন্যায়সঙ্গত হয়েছে।”
পাঁচ বছর পর পর একই চিত্র
প্রতি পাঁচ বছর পর পর পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা হয়। প্রতি বছরই এই কাঠামো ঘোষণার আগে পরে শ্রমিক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ আর শ্রমিকের মৃত্যু এক স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিবার দেখা গেছে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যে দাবি জানানো হয়, মালিকরা দিতে চায় অনেক কম। এরপর মজুরি বোর্ডে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে দর কষাকষিতে একটি ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা হয়।
প্রতি বছরই এই ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর কয়েক দিন শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে থাকে, যা ঘটেছে এবারও।
মঙ্গলবার ন্যূনতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করে।
পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে যারা একেবারে শুরুর গ্রেডে তারা এই বেতন পাবেন। ওপরের গ্রেডের বেতন কত হবে তা এখনও জানানো হয়নি।
বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি এবার ন্যূনতম বেতন দাবি করেছিল ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা, তবে মাঠ পর্যায়ে কেউ ২৩ হাজার, কেউ ২৫ হাজার টাকার দাবিতে বিক্ষোভ করছিল।
মালিকপক্ষ প্রথমে ১০ হাজার ৪০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করলেও পরে তা বাড়ায় এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষে দর কষাকষির পর নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা হয়।
নিয়ম অনুসারে নভেম্বরের মধ্যেই মজুরি চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। নতুন কাঠামো কার্যকর শুরু হবে ডিসেম্বরে। শ্রমিকরা জানুয়ারির বেতন পাবে নতুন কাঠামো অনুসারে।
পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার সময় একই রকমের ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় শ্রমিকদের দাবি ছিল ১৬ হাজার টাকা। মালিকপক্ষ শুরুতে দিতে চেয়েছিল ৬ হাজার ৩০০ টাকা। শেষ পর্যন্ত আট হাজার টাকা নির্ধারণ হয়।
২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এই মজুরি ঘোষণার পরও শ্রমিক বিক্ষোভ চলছিল। পরে অবশ্য তারা কাজে যোগ দেয়।
এবারও নতুন মজুরি ঘোষণার পর বিক্ষোভের মধ্যে গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে এদিন বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধও করে পোশাক শ্রমিকরা।
একশ ভাগ মানুষকে খুশি করা যায় না
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “একশ ভাগ মানুষকে কি খুশি করা যাবে? কেউ খুশি হবে কেউ হবে না। একটা অবস্থান থেকে জাস্টিফাই করতে হবে।“
তিনি মনে করেন, নতুন বেতন কাঠমোয় শ্রমিকরা নানাভাবে লাভবান হবেন। তিনি বলেন, “শুধু যে বেতন বাড়ানো হয়েছে তা নয়, বেসিকটাও বাড়ানো হয়েছে। এরপর প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ওভার টাইম রয়েছে।”
প্রতিটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার কারণে তাদের অন্তত ৫০০ টাকা করে সাশ্রয় হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতিতে যা দেওয়া হয়েছে, সেটা মনে হচ্ছে বেশ সুন্দর।”