শেখ হাসিনা বলেন, “দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন যেখানে ৫ শতাংশ বেড়েছে সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাড়ানো হয়েছে ৫৬ শতাংশ “
Published : 09 Nov 2023, 11:31 PM
তৈরি পোশাক খাতের কর্মীদের নতুন যে মজুরি কাঠামো ঘোষণা হয়েছে তাকে ‘ন্যায্য’ বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কারও উসকানিতে কান না দিয়ে কাজে যোগ দিতেও শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকার প্রধান সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “তারা (শ্রমিকরা) এটা না করে যদি কারও প্ররোচনায় রাস্তায় নামে, তাহলে যারা আজকে উসকানি দিচ্ছে তারাই এদের লাশ ফেলবে।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে বাসস।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “যেটা (বেতন) বাড়ানো হয়েছে সেটা নিয়েই তাদের কাজ করতে হবে।”
‘সরকার ন্যায্য বেতন বৃদ্ধি করেছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন যেখানে ৫ শতাংশ বেড়েছে সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাড়ানো হয়েছে ৫৬ শতাংশ।
“(ন্যূনতম বেতন) ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। তারা কাজে যোগদান করুক। যখনই সময় আসে তাদের (পোশাক শ্রমিক) সব রকম সুযোগ-সুবিধা আমরা করে দেই।”
মঙ্গলবার ন্যূনতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করে। পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে যারা একেবারে শুরুর গ্রেডে তারা এই বেতন পাবেন। ওপরের গ্রেডের বেতন বেশি হবে।
বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি এবার ন্যূনতম বেতন দাবি করেছিল ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা, তবে মাঠ পর্যায়ে কেউ ২৩ হাজার, কেউ ২৫ হাজার টাকার দাবিতে বিক্ষোভ করছিল।
মালিকপক্ষ প্রথমে ১০ হাজার ৪০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করলেও পরে তা বাড়ায় এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষে দর কষাকষির পর নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা হয়।
নতুন মজুরি ঘোষণার পর বিক্ষোভের মধ্যে গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে এদিন বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধও করে পোশাক শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় এবং বিকেলে কোণাপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। সাভারে কদিন ধরেই পোশাক কারখানা খোলা হচ্ছে না।
শ্রমিকদের বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “একজন শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা হলে সেটা দিন শেষে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা হয়ে যায়।”
‘কারখানা বন্ধ হলে গ্রামে ফিরতে হবে’
সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষে ১৯টি কারখানায় ভাঙচুর করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই কারখানা, যা তাদের রুটি রুজি দেয় তা বন্ধ বা ধ্বংস হলে, উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে তাদের কাজ থাকবে কোথায়? গ্রামে ফিরে যেতে হবে। এটা তো তাদের বুঝতে হবে।”
১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় পোশাক শ্রমিকদের বেতন আটশ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬শ টাকা করেছিল বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। জানান, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে এটি বাস্তবায়নে বিলম্ব করে।
এরপর টানা তিন মেয়াদে ৩ হাজার ২শ, ৫ হাজার ৩শ’ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে ন্যূনতম বেতন ৮ হাজার ৩শ’ টাকায় উন্নীত করার কথাও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু তাই নয়, বছরান্তে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, ডে কেয়ার সেন্টার সুবিধা, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাসহ গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। কেননা কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্যই তাদের সকল প্রচেষ্টা।”