শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোয় মিনিকেট চালের গড় দাম ছিল ৮০ টাকার মত, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৭৮ টাকায়। আর মাস খানেক আগে মিলত ৭৬ থেকে ৭৮ টাকায়।
Published : 24 Jan 2025, 09:37 PM
চালের দাম কেজিতে দু-চার টাকা যা কমেছিল, এক সপ্তাহ না পেরোতেই তা আবার বেড়ে গেছে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানভেদে প্রতিকেজি সরু চালের দাম বেড়েছে গড়ে দুই টাকার মত।
সংসারের অন্যান্য তরি-তরকারির মধ্যে স্বস্তিটা আছে শুধু শাক-সবজি নিয়ে। গরিবের প্রোটিনের ‘বড় যোগানদাতা’ ব্রয়লার মুরগির কেজি ছাড়িয়ে গেছে ২০০ টাকা; বেড়েছে কয়েক জাতের মাছের দামও।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাজধানীর বাজারগুলোয় মিনিকেট চালের গড় দাম ছিল ৮০ টাকার মত। গত সপ্তাহে তা বিক্রি হয় ৭৮ টাকায়। আর মাস খানেক আগে এই চাল মিলত ৭৬ থেকে ৭৮ টাকায়।
এদিন খুচরায় মানভেদে এক কেজি নাজিরশাইল চাল কিনতে ভোক্তাকে খরচ করতে হয় ৭৮ থেকে ৯০ টাকা। গত সপ্তাহে এই দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮৮ টাকা। আর মাসখানেক আগে মিলত ৭৬ থেকে ৮২ টাকার মধ্যে।
মোটা চালের দাম খুব একটা হেরফের হয়নি, মানভেদে প্রতিকেজি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৫৬ টাকার মধ্যে।
মোহাম্মদপুরের কাঁচাবাজারে শুক্রবার বাজার করতে আসা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “আগের মাসে সরু চালের দাম আজকের চেয়ে কম ছিল।”
চাল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইশাকুল হোসেন সুইট বলেন, "আমাদের দেশে চাল মজুদের তেমন ব্যবস্থা নেই। চালের মৌসুমে অন্যান্য দেশ মজুদ করে।
“শক্তিশালী মজুদ ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।”
চালের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি চলতি সপ্তাহে কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও সাংবাদিকদের বলেছিলেন। তিনি সরু ও মোটা চালের দাম বাড়ার তথ্য দিয়েছিলেন। দাম বাড়া পেছনে সিন্ডিকেটের হাত থাকার কথাও বলেন তিনি।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩১ অক্টোবর আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে। কিন্তু চালের বাজারে তার দৃশ্যমান প্রভাব নেই।
কয়েক মাস ধরে চড়ে থাকা চালের বাজারে স্থিতি ফেরাতে গত ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি কেনার প্রস্তাবেও অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
এছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর ভারত থেকে আসে ২৪ হাজার ৬৯০ টন সিদ্ধ চাল। ১২ জানুয়ারি আসে ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চালের আরেকটি চালান। কিন্তু এসব উদ্যোগ চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারেনি।
ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ পার
ব্রয়লার মুরগির কেজি মাঝে কমলেও তা আবার উঠে গেছে ২১০-২২০ টাকায়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজারে ক্রেতা বাড়ে বলে এদিন ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যায় বলে দাবি করছেন ক্রেতারা।
মোবারক হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, “দুই দিন আগেও ব্রয়লার মুরগি কিনেছি ১৯৫ টাকায়। আজ (শুক্রবার) সকালে শুনি ২১০ টাকা। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।”
তবে দুই সপ্তাহ ধরে ‘সোনালি’ মুরগির দাম ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দাম বেড়েছে বেশ কিছু মাছেরও। দেড়-দুই কেজির রুই মাছের কেজি চাওয়া হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। আগের দিন এই দাম ছিল ৩২০ টাকার মধ্যে।
এদিন বাজারে টেংরা ৫৪০ থেকে ৫৬০, ছোট চিংড়ি ৫৫০, বড় চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০, মলা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, শোল ৬০০, বোয়াল ৬০০, শিং ৩৫০ থেকে ৪০০ ও পোয়া মাছ ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংসের কেজি ৭৫০-৭৮০ টাকার মধ্যেই রয়েছে। খাসির মাংসের দামও খুব একটা নড়চড় হয়নি; পাওয়া যাচ্ছে ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।
স্বস্তি যা সবজিতেই
শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রতিকেজি করলা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। দরদাম করে অনেকে ৪০ টাকাতেও কিনেছেন।
প্রতিকেজি মূলা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। একেকটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০ থেকে ৩০, শসা ও খিরা প্রতিকেজি ৪০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, লম্বা আকৃতির বেগুন ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৫০ টাকা ও শালগম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজিতে।
এছাড়া গাজর ৫০ টাকা, আলু ৩০ থেকে ৪০, কাঁচামরিচ কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০, পেঁপে প্রতিকেজি ৫০, লেবু প্রতি হালি ৩০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।