উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আদালত নির্দেশ না দিলে আদানির চুক্তি বাতিল করা হবে না; তবে দাম কমাতে বলা হবে।
Published : 02 Dec 2024, 10:11 PM
শীত মৌসুমে চাহিদা কম থাকার কথা জানিয়ে ভারতের আদানি পাওয়ারকে চুক্তির অর্ধেক বিদ্যুতই সরবরাহ করতে বলেছে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বরাতে সোমবার এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বিপুল অংকের বকেয়া নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশের তরফ থেকে আদানিকে এ কথা জানানো হল।
বার বার তাগাদা দিয়েও বকেয়া অর্থ না পাওয়ায় আদানি গত ৩১ অক্টোবরই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছিল।
বাংলাদেশ এখন বলছে, ওই অর্ধেক বিদ্যুতই আদানি সরবরাহ করে যাক, এর মধ্যে বাংলাদেশ বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি এগিয়ে নেবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেন, “যখন তারা আমাদের সরবরাহ কমিয়ে দিল, আমরা হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। এখন শীত মৌসুমে চাহিদা কম, তাই আমরা তাদের বলেছি, তাদের প্ল্যান্টের দুটি ইউনিট চালানোর প্রয়োজন নেই।"
আদানি পাওয়ার ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের একটি কোম্পানি। তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর চুক্তি করে বিদ্যুৎ বিভাগ। ২৫ বছর মেয়াদী ওই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে আদানি পাওয়ার।
১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি পাওয়ার।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া আদায়ে গত ৩১ অক্টোবর একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তারা।
রয়টার্স লিখেছে, তারা যে নথি দেখেছে, তাতে নভেম্বর মাসে সক্ষমতার ৪১.৮২ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে আদানি, যা চলতি বছরের সর্বনিম্ন।
পিডিবির দুটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, বাংলাদেশ গত শীতে আদানির কাছ থেকে প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনেছিল। বাংলাদেশ আবার কবে পুরোমাত্রায় বিদ্যুৎ কেনা শুরু করবে পিডিবির কাছে তা জানতে চেয়েছিল আদানি। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর তারা পায়নি।
আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, বকেয়া আদায় না হওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে, যা তাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তারপরও তারা বাংলাদেশে সরবরাহ অব্যাহত রাখছে।
"আমরা পিডিবি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ক্রমাগত আলোচনা করে যাচ্ছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের বকেয়া দ্রুতই পরিশোধ করা হবে।"
রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেছেন, বাংলাদেশের কাছে আদানির পাওনা এখন ৬৫ কোটি ডলার। গত মাসেও বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে আট কোটি ডলার এবং অক্টোবরে ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে।
আদানি পাওয়ার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রায় ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা করে নেয়। এই দর ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদকের দরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।
বিষয়টি নিয়ে গত সরকারের আমলেই প্রশ্ন উঠেছিল, কিন্তু তার সুরাহা হয়নি। আর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চাহিদার প্রায় এক দশমাংশ বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ, ফলে রাতারাতি চুক্তি বাতিল করাও সরকারের জন্য ‘কঠিন’।
আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি ওই চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে ইতোমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের হাই কোর্ট।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের বরাতে রয়টার্স লিখেছে, আদালত নির্দেশ না দিলে ওই চুক্তি বাতিল করা হবে না। তবে আদানিকে দাম কমাতে বলা হবে।
তবে আদানি পাওয়ার বলেছে, বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনলেও বাংলাদেশ নাগরিকদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ দিচ্ছে গড়ে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। তাতে সরকারকে বছরে ৩২০ বিলিয়ন টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, “শুধু আদানি থেকে নয়, আমরা চাই সামগ্রিকভাবে বিদ্যুতের দাম গড় খুচরা দামের নিচে নেমে আসুক।”