কারওয়ানবাজারে পাইকারিকে পুরান আলুর দর ৫৮ টাকা, আশেপাশের বাজারে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮০তে।
Published : 15 Nov 2024, 08:52 PM
আলুর কেজি ৮০ টাকা ছুঁয়ে ফেলার মধ্যে ঢাকার কিছু বাজারে নতুন আলুর দেখা মিলেছে, যদিও সরবরাহ বেশ কম। এই আলু কিনতে গুনতে হচ্ছে আরও বেশি ১২০ টাকা।
এবার বন্যায় আলুর আবাদ পিছিয়ে যাওয়ার তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে নতুন আলু কীভাবে এল- সেই প্রশ্নে বিক্রেতারা জানালেন, এগুলো ভারত থেকে আমদানি করা।
পুরান আলুর পাইকারি আর খুচরা দরেও পার্থক্য দেখা গেছে তুলনামূলক বেশি। কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে বস্তা হিসেবে কিনলে দাম পড়ে ৫৮ টাকার মত, এক কিলোমিটার দূরেই তেজকুনিপাড়া কাঁচা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
নতুন আলু কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে ৮০ টাকা কেজিতে মিললেও তেজকুনিপাড়ায় ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকায়।
তেজকুনিপাড়া কাঁচা বাজারে মো. আলীর মা পরিচয়ে নারী বিক্রেতা বলেন, “দেশি আলু এক সপ্তাহ ধরে ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা হইছে। এখন দাম সব জায়গাতেই বেশি।”
কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ে ৬৪ কেজির এক বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়, এই হিসাবে এক কেজির দর হয় ৫৮ টাকা।
বিক্রেতা মো. হালিম বলেন, “আজ দেশি নতুন আলু কিছু আসতে দেখছি। তবে পরিমাণে খুবই কম। এগুলো ভারতের, ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে।”
তেজকুনিপাড়ায় নতুন আলু ১২০ টাকা ও পুরান আলু ৮০ টাকায় বিক্রির কথা শুনে তিনি বলেন, “খুচরা বিক্রেতারাই তো বাজার গরম করে। ৫৮ টাকায় কিনে ৮০ টাকায় বেচলে তো খুবই খারাপ কাজ করছে।”
অবশ্য পুরান আলুর বস্তা কিনলে কয়েক কেজি নষ্ট পাওয়া যায়, এই তথ্যটাও জানিয়ে রাখলেন ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ যদি অতি মুনাফা করতে যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুদের হিসাব বের করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “গতকাল রংপুর থেকে ৪৫ টাকা দরে কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের হয়েছে। এভাবে দিনাজপুরসহ সব জায়গায় যদি কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের করা যায় তাহলে বাজার স্বাভাবিক হবে।”
পেঁয়াজের দর অবশ্য নতুন করে আর লাফ দেয়নি। কারওয়ান বাজারে পাবনার পেঁয়াজ ১৪০ টাকা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর অন্য বাজারগুলোতে ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শীতের সবজিতে ফিরছে স্বস্তি
“আগে যেই মাল ৮০ টাকা, ১০০ টাকায় বেচছি, এহন সেই মাল বেচি ৬০ টাকার ভিতরে, কিছু তো আবার ৫০। দাম আরও কমবে।”
বলছিলেন কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শামীম আহমেদ।
শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ছে জানিয়ে এই বিক্রেতা বলন, “কাঁচা বাজারে আগের গরম আর হবে না।”
তবে শামীমের দোকানে সবজি কিনতে মনির হোসেন বলেন, “দাম আরও কমা উচিত।”
শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আরও বলেন, “সবজির দাম কোথায় ছিল, আর এখন কোথায় নামতেছে তার হিসেব আছে? শীতটা ভালো করে পড়ুক না। মাল বেশি আসলে পানির দামে সবজি বিক্রি করব।”
ক্রেতা মনির হোসেন বললেন, “দাম তো তেমন করে কমল না ভাই। এই যে টমেটোর দাম বেশি। আরও কিছু পণ্যের দাম এখনও উর্ধ্বমুখী। বাজারে স্বস্তিবোধ হচ্ছে না পুরোপুরি।”
বাজারে কাঁচা টমেটো, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও মুলার মত শীতের কিছু সবজির সরবরাহ বেশি দেখা গেছে। দাম অনেকটাই কমেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে শিম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১০০ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ছোট আকারের প্রতিটি ৩৫ টাকা, আর বড় আকারেরগুলো ৪০ টাকায় পাওয়া গেছে।
ভারতীয় টমেটোর ১৩০ টাকা, দেশি কাঁচা টমেটো ৭০ টাকা, বড় আকারের লাউ ৬০ টাকায় পাওয়া গেছে কারওয়ান বাজারে।
গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন সবজির মধ্যে পটল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, পেঁপে ৪৫ টাকায় বেচতে দেখা গেছে।
করলা, ঢ্যাঁড়সের মত পণ্যের দাম বেড়েছে, বেগুন আগের সপ্তাহের দরেই মান ও প্রকার ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সবজি বিক্রেতা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “সিজন শেষ হওয়ায় এগুলোর দাম এখন চড়া।”
ডিমের দাম আরও কমেছে
ডিমের বাজারেও উত্তাপ কমে কারওয়ানবাজারে ডজনপ্রতি দর নেমেছে ১৪০ টাকায়। এলাকার দোকানে দর এখনও ১৫০ থেকে ১৫৫ রাখা হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০, সোনালির দর কারওয়ানবাজারে দেখা গেছে ৩১০ টাকা।
মাছের দামও কিছুটা কমেছে।
কারওয়ানবাজারে তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চাষের পাঙাস ১৬০ টাকা থেকে ১৮০, রুই আকার ভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আগের সপ্তাহে দাম কিছুটা বেশি ছিল, বলছেন বিক্রেতারা।