সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন এ শিল্পগোষ্ঠী সাতটি ব্যাংক থেকে ৩৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বলে জানতে পেরেছে তদন্ত সংস্থাটি।
Published : 01 Sep 2024, 09:29 PM
আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপ এবং এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি মিলিয়ে সাতটি ব্যাংক থেকে ’প্রতারণা ও জালিয়াতির‘ মাধ্যমে ৩৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন এই শিল্পগোষ্ঠী ঋণ নিয়েছে বলে অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যালোচনায় জানতে পেরেছে তদন্ত সংস্থাটি।
বিপুল এ ঋণের মধ্যে থেকে ‘বিদেশে পাচারের’ প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানি লন্ডারিং আইনে অর্থপাচারের অনুসন্ধানে নেমেছে বলে রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত বর্তমান পরিস্থিতিতে আগের দিন সিআইডি আরেক আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলমের বিরুদ্ধেও অর্থপারের অনুসন্ধান শুরুর কথা জানায়।
রোববার সিআইডি বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে অনুসন্ধানে নামার তথ্য দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ দলের নেতাদের গ্রেপ্তার হওয়ার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও গ্রেপ্তার হন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আন্দোলনের সময় কয়েকজনের নিহত হওয়ায় ঘটনার দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কয়েক দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে।
পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তার বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক হতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) বেক্সিমকোসহ আরও আলোচিত আরও চার কোম্পানি বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও নাসার মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর কথা জানায়। তাতে সালমান রহমানের নামও আসে।
এমন পরিস্থিতিতে এবার সিআইডি বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামার কথা জানায়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগটি বলছে, “অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যালোচনায় বেক্সিমকো গ্রুপ গত ১৫ বছরে ৭টি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহনপূর্বক বিদেশে পাচার করেছে।
”যার মধ্যে জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ৫৬৭১ কোটি এবং এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩৩,৪৭০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপ গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।”
সিআইডি বলছে, “সৌদি আরবে যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বেশির ভাগ অর্থ বাংলাদেশ হতে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বেক্সিমকো গ্রুপ এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে মানিলন্ডারিং আইন ও বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি‘র ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
সালমান রহমান ও তার ছেলে-পুত্রবধূর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ
বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও নাসা গ্রুপের মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধানে এনবিআর
সালমান, আনিসুল ও জিয়াউল আরও ১০ দিনের রিমান্ডে