সালমান রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার জালিয়াতি ও ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
Published : 22 Aug 2024, 08:03 PM
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পর শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
এ দুজন ছাড়াও সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং সাবেক এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করবে দুদক।
তাদের বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন জানিয়েছেন।
বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক হতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে।
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, “ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার কাবিখা প্রকল্পের ২ কোটি ২৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৯৭ টাকা, কাবিটা প্রকল্পের ৩ কোটি ৫৯ রাখ ৪০ হাজার ৫৪৬ টাকা ও ২৬০ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন গম ও ২৩৪ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন চাউল বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাত করেন।”
সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৫ বছর মেয়াদী ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকার ‘সুফল’ প্রকল্পে মন্ত্রী ও তার ছেলে ১০ শতাংশ কমিশন নিয়ে ঠিকাদারদের কাজ দেন। বিভিন্ন খাতে ভুয়া খরচ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। ৮০-৯০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে বন কর্মকর্তাদের বদলি করেন।
“এ ছাড়া পরিবেশ দূষণে মারাত্মক প্রভাব রয়েছে এমন তরল বর্জ্য সৃষ্টিকারী বিভিন্ন কল-কারখানায় ইটিপি পরিদর্শন না করেই তারা সার্টিফিকেট দেন। প্রায় ৭ কোটি টাকার বিনিময়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জমির রেজলুশনে স্বাক্ষর করে বিএফডিআইসির তৎকালীন চেয়ারম্যানকে ওই জমি জলবায়ু ট্রাস্টকে দিতে বাধ্য করেন।”
অপরদিকে নসরুল হামিদ ও পলকের বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন তারা।
গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট সরকারপতনের এক সপ্তাহ পর ১৩ অগাস্ট নৌপথে পালানোর সময় ঢাকার সদরঘাটে গ্রেপ্তার হন সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে হতাহতের ঘটনায় নিউ মার্কেট থানার এক মামলায় ‘ইন্ধনদাতা’ হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরের দিন ১৪ অগাস্ট রাতে ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকার নিকুঞ্জ আবাসিক থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জুনায়েদ আহমেদ পলককে। পল্টন থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহিংসতা ও প্রাণহানির অভিযোগে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।