তাদের পরিচালিত সব ব্যাংক হিসাবে লেনদেন ৩০ দিনের জন্য বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে বিএফআইইউ।
Published : 29 Aug 2024, 12:24 AM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে ও পুত্রবধূর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আর্থিক খাতের গোয়েন্দা বিভাগ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বুধবার সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। তাদের পরিচালিত সব ব্যাংক হিসাবে লেনদেন ৩০ দিনের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
আন্দোলনে সহিংসতার সময় মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা সালমান রহমানের ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে বলা হয়।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা এ বিষয়ে বিএফআইইউ এর চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, ”উল্লিখিত ব্যক্তি ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা এবং তাদের নামে কোনো লকার থাকলে তার ব্যবহার ৩০ দিনের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হল।”
তাদের সবার নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, “তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের (কোম্পানি হিসাবসহ) নামে পরিচালিত যে কোনো ধরনের হিসাব সংক্রান্ত তথ্যাদি (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি দালিলাদি, লেনদেন বিবরণী) এবং প্রদত্ত এক্সেল ছক মোতাবেক তথ্যাদি পত্র ইস্যুর তারিখ হতে চার কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে অনুরোধ করা হল।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার পদক্ষেপের মধ্যে এবার সালমান রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশনা এল।
এর আগে গত ২২ অগাস্ট বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেদিন বেক্সিমকো গ্রুপের পাশাপাশি ভিন্ন সময়ে আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও নাসার মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) চিঠি পাঠায়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিলে সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ৫ অগাস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লং মার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা।
এরপর সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ আগেই দেশে ছেড়েছেন বলেও খবর আসে। এরমধ্যেই ঢাকার পুলিশ তাকে সদরঘাট থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুলেকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয়।
ঢাকার সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে বিপুল বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যায় বলে পরে রিমান্ড আবেদনের বর্ণনায় লিখেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. সজীব মিয়া।
গ্রেপ্তারের পরদিন নিউ মার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে (২৪) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তাদের দুজনের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন ঢাকার মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ।
গ্রেপ্তারের সময় সালমান এফ রহমানের কাছ থেকে পাঁচটি সবুজ রঙের পাসপোর্ট ও একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়ার তথ্য রিমান্ড আবেদন যুক্ত করা হয়েছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে ১৭ হাজার ৫১২ ইউএস ডলার, ৭২৬ সিঙ্গাপুরী ডলার ও তিনটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়া গেছে বলে রিমান্ড আবেদন বলা হয়েছে।
এ হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকার সময়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্তও নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তার বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক হতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে।
পরে সালমান ও আনিসুলকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার সময় আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে লালবাগ থানায় করা মামলায় এবং নিউমার্কেট থানা এলাকায় ঢাকা কলেজের অনার্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সবুজ আলী হত্যা মামলায় তাদের পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
আরও পড়ুন
সালমান, আনিসুল ও জিয়াউল আরও ১০ দিনের রিমান্ডে