সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা করে বাড়ানোর ২০ দিনের মাথায় আবারও ১২ টাকা করে বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে সরকারের কাছে গেছেন ব্যবসায়ীরা।
Published : 28 Feb 2022, 10:19 PM
এবারও বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতিকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর এমন প্রস্তাব দেওয়া হলেও রোজা সামনে রেখে তা বিবেচনার সুযোগ নেই বলে বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাব তো তারা দিতেই পারেন। আমরা এই মুহূর্তে এটা নিয়ে ভাবছি না।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন তেলের যেই দামটা বেড়েছে, সেটা দেশে আসতে অন্তত দুমাস লাগবে। প্রতি ১০/১৫ দিন পর পর তো আর দাম বাড়ানো যাবে না।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও এখনই দাম বাড়ানো হচ্ছে না বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব নুরুল ইসলাম মোল্লার কথাতেও।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা প্রস্তাব করেছিলাম, উনারা অনুমোদন করেন নাই। আমরাও আর আপাতত এটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন সময় করে আমাদের সঙ্গে বসবেন। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।“
আগের এক মাসের আমদানি মূল্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পরের মাসে তেলের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে হিসাবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে জানুয়ারি মাসের আমদানি মূল্য বিবেনায় আনা হয়েছিল।
সয়াবিন তেলসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের মূল্য সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে বাজার পরিস্থিতির অস্থিরতার কারণে খুচরায় এসব মূল্য মানা হচ্ছে না।
তবে শুরু থেকেই এ দরে সীমাবদ্ধ থাকছে না কেনাবেচা। নির্ধারণের আগেই খুচরা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।
গত শুক্রবার খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামে বিক্রি হতে দেখা গেলেও খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৭ টাকায়।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা করে বাড়ানোর একটি প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনে জমা দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে এমনটি করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এ প্রস্তাব নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসবেন। তবে এই মুহূর্তে দাম বাড়ানো সম্ভব নয়।”
বিশ্ববাজারে চলতি মাসেও তেলের দাম আরেক দফায় বেড়েছে উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম বলেন, গত বছর যে সয়াবিন তেলের দাম প্রতিটন ৬৫০ ডলার ছিল সেটা এখন বেড়ে গিয়ে ১ হাজার ৫৫০ ডলার উঠেছে। দাম এত যে কীভাবে বাড়ল আমরা বুঝতে পারলাম না। চলতি মাসের শুরুতে যখন দাম নির্ধারণ করা হয় তখনও ১৪০০ ডলার বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন ১৫৫০ ডলার থেকে ১৫৮০ ডলারে উঠেছে তেলের দাম।
“সামনে রমজান মাস, এই মুহূর্তে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ কোনোভাবেই সুন্দর হচ্ছে না। কিন্তু কেউ তো লোকসান দিয়ে ব্যবসাও করতে পারবে না। তাহলে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে বাধ্য হয়েছে অ্যাসোসিয়েশন।“
বর্তমানে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, গ্লোব, সেনাকল্যাণ, বসুন্ধরাসহ ১০/১২টি শিল্পগ্রুপ সয়াবিন তেলের ব্যবসায় যুক্ত রয়েছে।