“কিছু কিছু সবজি ছাড়া বাকি সবজির দাম কমই আছে,” বলেন এক বিক্রেতা।
Published : 03 May 2024, 09:10 PM
গরমের মধ্যে বাজারে বেড়েছে মরিচ, পেঁয়াজ, পেঁপে ও বেগুনের দাম। তবে অন্য সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালেই আছে বলে ভাষ্য বিক্রেতাদের।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি বিন্দু মরিচ খুচরায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে, আর সাপ্লাই মরিচ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
একই বাজারের আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতারা বিন্দু মরিচ ৮৫ টাকা আর সাপ্লাই মরিচ ৬৬ টাকা কেজি দরে কিনেছেন বলে জানান খুচরা দোকানি হাবিবুর রহমান বাবলু।
তিনি বলেন, “কাঁচা বাজারের দামের কোনো দিনক্ষণ ঠিক নাই। আজ এক দাম, কালকে আরেক দাম। কাল হঠাৎ ৩০ টাকাও হইতে পারে। দ্রুতই দাম বাড়ে-কমে। এক সপ্তাহ আগে মরিচ আমিই বেচছি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। আমার কাছে দেশি যে মরিচ আছে- এটা সিলেটের। এটা কড়া ঝাল। তাই চাহিদা বেশি।
“আমদানি কমে গেলে দাম বাইরা যায়। এটা (দেশি মরিচ) মোকামেই ৭০ কইরা কিনতে হইছে। ঢাকা আনার খরচ, সরবরাহকারীদের লাভ সব মিলিয়ে দাম বাইড়া যায়। আর আমদানি বেশি হইলে- যখন মাল বাজারে পড়ে থাকার সম্ভাবনা থাকে, পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে; তখন আমরা বাধ্য হয়েই মাল কম দামে ছেড়ে দেই।”
বাবলুর দোকান থেকে এক কেজি মরিচ কিনলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ। বিক্রেতার কাছে তিনি প্রশ্ন রাখেন, “গত সপ্তাহে এক কেজি কিনলাম ৫০ টাকা দিয়ে, এই সপ্তাহে ১০০ কেন বলতেছেন?”
বাবলুর সোজাসাপ্টা জবাব, “কৃষক বেশি দামে ছাড়ছে, সেটা সাপ্লায়াররা লাভে কারওয়ান বাজারে আনছে, পরে পাইকারদের থেকে আমি কিনছি। সবাই কিছু কিছু লাভ কইরা এই দাম।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বিক্রেতা বাবলু বলেন, “সবজির দাম যদি একটু বাড়ে, সেটার পিছনে কারণ আছে। সারের দাম বেশি, উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
“এসব সরকারকে কমাইতে কন আগে। উৎপাদন খরচ না কমাইলে বাজারে দাম আমরা ছোট ব্যবসায়ীরা কমাব কীভাবে?”
পাশের বিক্রেতা মুনছুর এ প্রতিবেদককে ডেকে বললেন, “ভাই গতকাল থেকেই মরিচের দাম একটু বাড়তির দিকে। আগামীকাল দাম আরও বাড়ব মনে হইতাছে। আর এই দাম তো আমরা বাড়াই না। কৃষকরাই লাভ করে।”
মরিচ কিনতে এসে দাম শুনে অবাক বনে গেলেন এমদাদুল হক।
তিনি বলেন, “কাঁচা মরিচের দাম একদিনে বাড়ল, মেনে নিলাম। শুকনা মরিচের দাম কেন বাড়ল? গত সপ্তাহে জেনেছিলাম ৩৮০, আর আজ ৪০০ এর উপরে কেনা লাগে।”
পেঁপের বাজারও গরম
কারওয়ান বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহ খানেক আগে ক্রেতারা পেঁপে কিনেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। এখন বাজারে যে পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে তা পরিপক্ব নয় বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা।
জসিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতা সাব্বির রহমানের বাতচিত হচ্ছিল পেঁপের অপরিপক্বতা নিয়ে।
জসিম বলছিলেন, “এই অপরিপক্ব পেঁপে কেন এতো দাম চাইছেন? এগুলোর তো বয়সই হয় নাই।”
তার কথায় বিক্রেতা সাব্বির বললেন, “আমরা যখন কিনছি, এগুলোরই দাম বেশি নিছে আমাদের কাছ থেকে। বাজারে দাম বেশি থাকায় কৃষকরা আর দেরি করে নাই। অপরিপক্ব মালও ক্ষেত থেকে উঠাইছে।”
বিক্রেতা সাব্বির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোকামে শুনলাম গরমে অনেক বাগানের পেঁপে গাছ মইরা গেছে। কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে আছে। তাই দাম বেশি।”
চড়েছে বেগুনের বাজার
সপ্তাহ খানেক আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া বেগুন শুক্রবার ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে।
বিক্রেতা ইমরানুল হক বলেন, “বেগুনের বাজার একদিনের সাথে আরেক দিনেরটা মিলাইতে পারবেন না। আজ ৬০, গতকাল আর পরশু বেগুনের দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। দুইদিনে তবুও ১০ থেকে ১৫ টাকা কমছে।
"গত সপ্তাহে দাম কম ছিল, কারণ বাজারে বেগুনে ভরপুর ছিল। বাজারে যে মাল বেশি থাকবে, সেটার দাম কম থাকে।"
তবে ক্রেতাদের কেউ কেউ এটাকে খুব বেশি দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন না।
ক্রেতা নাইমুল ইসলাম বলেন, “আমি সবসময় এই দোকান থেকেই সবজি কিনি। এখানে গত সপ্তাহে বেগুন কিনেছিলাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। আজ ৬০ টাকা চাচ্ছে।
“এটা খুব বেশি না। সাপ্লাইয়ের উপরে দাম কিছু আপ-ডাউন হয়, এটা স্বাভাবিক।”
ঝাঁঝ বাড়ল পেঁয়াজের, চড়েছে আলুও
বেশ কয়েকদিন ধরেই খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৬০ টাকা কেজি দরে। তবে শুক্রবার ক্রেতাদের কাছে দাম চাওয়া হচ্ছিল ৭০ টাকা কেজি দরে।
বিক্রেতারা জানালেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যও বলছে, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি। শুক্রবার দাম বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজি।
নাটোর থেকে এসে দুই বছর ধরে কারওয়ান বাজারে আলু-পেঁয়াজের ব্যবসা করেন মেহের আলী।
তিনি জানালেন, গত সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি। একই পেঁয়াজ ৩ দিন ধরে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তিনি।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি দোকান মাতৃ ভান্ডারের মালিক সজীব শেখ বলেন, “আজ রেট ৬৫ টাকা হয়েছে। আগে ছিল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি।”
এদিকে পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আলুর দামও।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে আলুর দাম ছিল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি, যা ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি।
শুক্রবার কারওয়ান বাজারে খুচরায় আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি। আর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় এ দাম ৫৫ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা কুদ্দুস মিয়া বলেন, “দুয়েকদিন ধইরাই দামডা একটু বাড়ছে। আজ ৪৮ টাকা কেজিতে বেচতাছি। আর যেটা খুব ভাল আলু, সেটা ৫০ টাকা কেজি।”
কম দামে যেসব সবজি বাজারে মিলছে
কারওয়ান বাজারে বিক্রেতারা পটল, বরবটি করলা ও চিচিঙ্গা বিক্রি করছেন ৪০ টাকা কেজি দরে। আর ক্রেতারা ঢেঁড়স, গাজর ও টমেটো বেচছেন ৩০ টাকা কেজিতে।
এছাড়া ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা পিস আর লাউয়ের দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পিস।
সবজি বিক্রেতা সেলিম মোল্লা বলেন, “কিছু কিছু সবজি ছাড়া বাকি সবজির দাম কমই আছে। দাম বেশি মরিচ, বেগুন আর পেঁপের।”
এদিকে মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ডিম আগের দামই রয়েছে, ৪০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন গত ২৬ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
মুরগি মরে যাওয়ার কারণে খামারিদের অনেকে মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে মুরগির দাম যে হারে কমার কথা, সেভাবে কমেনি।