ক্ষতিগ্রস্ত ওই টার্মিনাল সিঙ্গাপুর পৌঁছাবে বুধবার; আগামী ১৪ জুলাই মেরামত হয়ে আসতে পারে, বলেন জ্বালানি সচিব।
Published : 19 Jun 2024, 12:17 AM
দেশের জ্বালানি খাতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ধাক্কার রেশ এখনও রয়ে গেছে; সাগরে ভাসমান একটি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে কেনা চারটি এলএনজি কার্গোর সরবরাহ আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনালটি সিঙ্গাপুর থেকে মেরামত হয়ে না আসা পর্যন্ত এলএনজির স্পট মার্কেট থেকে নতুন করে কার্গোর আর সরবরাহ নেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
জ্বালানি সচিব মো. নূরল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী ১৪ জুলাই সিঙ্গাপুর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ওই টার্মিনাল মেরামত না হয়ে আসা পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে না। একই কারণে চার কার্গো এলএনজি কেনার সরবরাহ আদেশও বাতিল করা হয়েছে।
এসব তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) মে মাসের শেষ থেকে জুনের তৃতীয় সপ্তাহে সরবরাহ করার কথা ছিল। এতে করে চলমান গ্যাস সংকটে আরও কিছুদিন ভুগতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশের দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে সামিটেরটি রেমালের আঘাতে গত ২৬ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। এটি থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস যুক্ত না হওয়ায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ ও সিএনজি ফুয়েলিং স্টেশনে।
আরও পড়ুন:
এলএনজি টার্মিনালে রেমালের ধাক্কা, সংকট সিএনজি স্টেশনে
সাগরে গভীর নিম্নচাপ: গ্যাস সরবরাহে বিঘ্নের শঙ্কা
জ্বালানি সচিব বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় স্পট মার্কেট থেকে এর আগে কেনা এসব কার্গোর ক্রয়াদেশ বাতিল করা হয়েছে। টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় এগুলো ব্যবহার করার সক্ষমতা ছিল না। যে কারণে সেগুলোর ক্রয়াদেশ বাতিল করা ছাড়া উপায় ছিল না।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের পথে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত ওই টার্মিনাল বুধবার সেখানে পৌঁছাবে। এরপর সারাই শেষে আগামী ১৪ জুলাই তা মহেশখালীতে এসে যাবে।
এর আগে পর্যন্ত নতুন করে স্পট থেকে এলএনজি কার্গো না কেনার কথাও বলেন সচিব নূরল আলম।
সম্প্রতি একটি কার্গো কেনার জন্য সরকারের মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হলেও তা পিছিয়ে দেওয়া লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময়ের মধ্যে আর বাতিল করতে হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নতুন করে আর বাতিল করতে হবে না। ওই দুর্ঘটনার পর থেকে এভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখন দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় ৫-৬টি কার্গো কেনা হচ্ছে। সেগুলো দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে।
যে চারটির ক্রয়াদেশ বাতিল করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে দুটির দর ছিল ১০ ডলারের নিচে এবং দুটি এর চেয়ে বেশি।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, এখন স্পট মার্কেটে দাম ১৩ ডলারের আশপাশে থাকায় এসব কোম্পানি বাংলাদেশের ক্রয়াদেশ বাতিলে আপত্তি জানায়নি। তারা খুশি মনেই তা মেনে নিয়েছে।
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার আদেশ বাতিলের খবর দিয়ে মঙ্গলবার রয়টার্স লিখেছে, এলএনজি কেনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সিঙ্গাপুরের গানভরের কাছ থেকে তিনটি এবং কাতারএনার্জির কাছ থেকে এই চারটি স্পট কার্গো কেনার চুক্তি করেছিল।
পেট্রোবাংলার জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স বলেছে, মে মাসের শেষের দিকে এবং ৭ থেকে ১১ জুনের মধ্যে গানভরের কার্গোগুলো এবং ১৯ থেকে ২১ জুনের মধ্যে কাতারএনার্জির কার্গো সরবরাহ করার কথা ছিল।
এর আগে ২৬ মে ঘূর্ণিঝড়ের সময় সামিটের ভাসমান টার্মিনালকে আঘাত করে কয়েকশ টন ওজনের একটি ইস্পাতের পন্টুন। এতে টার্মিনালের হাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্যাংকে পানি ঢুকে যায়। তবে কর্মীদের চেষ্টায় টার্মিনাল ও তাতে থাকা কার্গো বাঁচানো সম্ভব হয়।
এরপর টার্মিনালটির ভাসমান স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটের (এফএসআরইউ) কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ওই সময় সামিট এলএনজি সরবরাহে ‘ফোর্স ম্যাজুর’ ঘোষণা করে মেরামতের উদ্যোগ নেয়।
রয়টার্স লিখেছে, ঈদের ছুটির কারণে সামিট এলএনজি ও কাতারএনার্জির কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য পাওয়া যায়নি। গানভর মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
২০১৯ সালের এপ্রিলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা সামিটের এফএসআরইউ এর দৈনিক রিগ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান কেপলারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বার্ষিক এলএনজি আমদানি বাড়ছে। ২০২৩ সালে ৫২ লাখ টন জ্বালানি আমদানি করা হয়েছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ২৬ লাখ টন এলএনজি আমদানি করেছে। মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ ছয় লাখ টন এলএনজি কিনেছে।