যুক্তরাষ্ট্রের সেবা রপ্তানির হিসাব না পাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতির হিসাব পুরোপুরি ‘ধারণাভিত্তিক’ হয়ে যাচ্ছে বলে বাণিজ্য উপদেষ্টার উপলব্ধি।
Published : 16 Apr 2025, 05:23 PM
বাড়তি শুল্কের বোঝা কমাতে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর যে মার্কিন সেবা কিনছে, তা হিসাব করে না যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বড় দেখায়। এ বিষয়টিও আলোচনায় তুলে ধরা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলারের মত। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, বাংলাদেশে তার চেয়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বিশ্বের শতাধিক দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যেও চড়া হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে। সরকারের অনুরোধে সেই ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হলেও আগের ১৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশকে দিতেই হবে।
এই বাড়তি শুল্ক দেশের প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা।
এ অবস্থায় বাড়তি শুল্ক এড়াতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হবে। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে কী করা যায়, তা ভাবছে সরকার।
বুধবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “যেসব পণ্য আমরা আমদানি করি, তার ৭৫ শতাংশ চারটা পণ্যে সিমাবদ্ধ। তুলা, এলএনজি সয়াবিন ও মেটাল স্ক্র্যাপ। বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ৬ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি ৮ বিলিয়ন ডালার আর আমদানি ২ বিলিয়ন ডলার।
“তবে এখানে কথা হচ্ছে, ঘটতি হিসাবের সময় যুক্তরাষ্ট্র কেবল পণ্য হিসাব করছে. সেবা হিসাব করছে না। আমরা যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি, গুগল, ফেইসবুক ব্যবহার করি, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করি, এগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেবাখাতের। এই সেবা রপ্তানির হিসাবটা তারা আমলে নিচ্ছেন না। এর কারণেই এখন যে পার্থক্যটা দেখা যাচ্ছে সেটা।”
বিষয়গুলো সামনে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় তুলে ধরা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বেশি আমদানি কম। এবং আমাদের রপ্তানি পণ্যের ক্রেতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র একক বৃহত্তম দেশ। আমাদের জন্য বিষয়টি চিন্তার।”
যুক্তরাষ্ট্রের সেবা রপ্তানির হিসাব না পাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতির হিসাব পুরোপুরি ‘ধারণাভিত্তিক’ হয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আমরা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি তা ঠিক করতে দেশের বিদগ্ধ অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ নিয়ে কিছু কর্মসমষ্টি তৈরি করেছি। প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভি লুৎফে সিদ্দিকী ও বাণিজ্য সচিব আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। সেখানে শুল্ক নির্দিষ্টকরণের দায়িত্বে থাকা ইউএসটিআর এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন।”
বিষয়টি সুরাহা করতে সরকার ‘বসে নেই’ মন্তব্য করে বশিরউদ্দীন বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নিজেই এবং আমি, লুৎফে সিদ্দিকী, অর্থ উপদেষ্টা বারংবার বৈঠক করছি।”