জুলাই-মার্চ: বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৪১.৬৩%

বড় অংকের ঘাটতি কমেছে চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যেও; উভয় হিসাবেই আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 05:52 PM
Updated : 10 May 2023, 05:52 PM

ডলার সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপে বাণিজ্য ঘাটতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে; মার্চ শেষে আরও কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬১ কোটি ডলার, যা এক বছর আগের তুলনায় ৪১ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত এসময়ে চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতিও কমে হয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল এক হাজার ৪৩৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে কমেছে ১০৭০ কোটি ডলার বা ৭৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের পরিসংখ্যানের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে উভয় হিসাবেই আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতি কমেছে।

হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬১ কোটি ডলার। এক বছর আগে গত মার্চে যেখানে ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫০৩ কোটি ডলার। এ হিসাবে ঘাটতি কমেছে ১০৪২ কোটি ডলার (১০.৪২ বিলিয়ন) ডলার, শতকারা হিসেবে কমেছে ৪১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এক মাস আগে ফেব্রুয়ারি শেষে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল এক হাজার ৩৩৪ কোটি ডলার।

চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৯৩ কোটি ডলার, যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ে আমদানি খাতে ব্যয় ছিল ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলার।

চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫৬২ কোটি ডলার বা ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে তিন হাজার ৯৩২ কোটি ডলারের, যা গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে রপ্তানি থেকে আয় এসেছিল ৩ হাজার ৬৪৯ কোটি ডলার।

রেকর্ড ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি এবং ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়েছিল চলতি অর্থবছর।

এরপর নানা মুখী উদ্যোগে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসার প্রভাবে এসময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে।

চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা মানে নিয়মিত লেনদেনে কোনো ঋণ করতে হয় না দেশকে। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

রিজার্ভ কমে আসা এবং চলতি হিসেবে রেকর্ড ঘাটতির মধ্যে সরকার বাজেট সহায়তাসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও দেশের কাছে অর্থায়নের চেষ্টা শুরু করে। এর অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার।

এটির প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার গত ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই পেয়েছে বাংলাদেশ। কিস্তিতে অবশিষ্ট অর্থ পাওয়া যাবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।

অপরদিকে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে বুধবার ৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী জুন নাগাদ আরও কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণে অর্থ পাওয়ার আশায় রয়েছে বাংলাদেশ।

এসব অর্থ ছাড় হলে চলতি হিসাবের ঘাটতি আরও কমে তা ভারসাম্য আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Also Read: রিজার্ভ আবার ৩০ বিলিয়ন ডলারের উপরে

Also Read: জুলাই-জানুয়ারি: বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২৮.৮৪%

Also Read: ২০২১-২২ অর্থবছর: ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি

এদিকে গত মার্চ শেষে সামগ্রিক লেনদেনের (ওভার অল ব্যালেন্স) ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৮১৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ১৬৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মার্চে ঘাটতির এ পরিমাণ ছিল ৩০৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে; মার্চ শেষে যা দাঁড়িয়েছে ২২১ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চে এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। গত ফেব্রুয়ারিতে এ হিসাবে ঘাটতি ছিল ১৯৭ কোটি ডলার।