রোববার অমর একুশে বইমেলা নতুন বই এসেছে ৯২টি।
Published : 11 Feb 2024, 07:50 PM
একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে বইমেলা, সেখানে দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার বই উপেক্ষিত থাকছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে এবার মেলায় আদিবাসী ভাষার ৪টি নতুন বই নিয়ে এসেছে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী।
‘চাকমা ভাষায় রূপকথা’, ‘ম্রো ভাষায় রূপকথা’, ‘সাঁওতাল ভাষায় রূপকথা’ এবং ‘মারমা ভাষায় রূপকথা’ শিরোনামে চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলোতে বিভিন্ন গল্পকে ওই নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও বাংলায় অনূদিত করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালে ইয়াঙ্গান ম্রোর লেখা ‘ম্রো রূপকথা’ ও ২০২০ সালে ‘ম্রো রূপকথা-২’ প্রকাশ করেছিল বিদ্যানন্দ।
যে দেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, সেই দেশে যাতে সবার মাতৃভাষা চর্চা সুযোগ তৈরি হয়, সেজন্য এসব বই রচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বইগুলোর অনুলেখক মিজানুর রহমান সৈকত।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলা ভাষা ছাড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা রয়েছে। কিন্তু ভাষাগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলে আমাদের অনাথালয়ে যে শিশুরা থাকে, আমরা দেখেছি তারা তাদের ভাষা ভুলতে বসেছে। সেই কনসার্ন থেকে আমরা বইগুলো প্রকাশ করেছি।”
পাহাড়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের অনাথালয়ে বাস করা শিশুদের কাছ থেকে শোনা গল্পগুলোকে নিয়েই বইগুলো সাজানো হয়েছে বলে জানান সৈকত।
তিনি বলেন, “পাহাড়ি অঞ্চলে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের অনাথালয়ে প্রায় চারশ’র মতো বাচ্চা আছে। তারা তাদের বাবা-মা বা দাদা-দাদী, নানা-নানীর কাছে যে গল্পগুলো শুনেছে, যুগ যুগ ধরে মুখে মুখে যে গল্পগুলো হয়ে আসছে, সেই গল্পগুলো আমরা তুলে এনেছি।
“আমরা চেষ্টা করছি ভাষাগুলো যাতে জীবিত থাকে, বেঁচে থাকে, হারিয়ে না যায়। ভাষা-ভাষী মানুষগুলো যখন বইগুলো পড়বে, নিজের ভাষাটা ঠিক থাকবে।”
বইগুলো প্রকাশ সম্পর্কে ভূমিকায় বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর সম্পাদক কিশোর কুমার দাস লিখেছেন, “যে দেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, সে দেশের মানুষ মাতৃভাষা পড়তে এবং লিখতে সুযোগ পাচ্ছে না দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি। আমরা চেয়েছি প্রতিটা শিশুই যেন স্পর্শ করতে পারে এবং অনুভব করতে পারে মা-বাবার মুখ থেকে উচ্চারিত শব্দের অক্ষরগুলো কেমন।
“অনেক চেষ্টা করেও আমরা এই ভাষাভাষী লেখক খুঁজে পাইনি। তাই সাধারণ মানুষ এবং শিশুদের কাছ থেকে শোনা গল্পগুলোকে নিয়েই বইগুলো সাজিয়েছি।”
রোববারের বইমেলা
রোববার অমর একুশে বইমেলা নতুন বই এসেছে ৯২টি।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: কলিম শরাফী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এখানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরওয়ার মুর্শেদ। আলোচনায় অংশ নেন মাহমুদ সেলিম এবং গোলাম কুদ্দুছ।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক রূপা চক্রবর্তী বলেন, “বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব কলিম শরাফী তার দীর্ঘ কর্মময় জীবনে অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। তার দ্যুতিময় ব্যক্তিত্ব, অকুতোভয় চিত্ত এবং লড়াকু জীবনাদর্শ আমাদের প্রত্যয়ী করে।”
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সরকার মাসুদ, কথাসাহিত্যিক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন এবং নাট্যগবেষক মাহফুজা হিলালী।
সোমবার যা থাকছে
সোমবার অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিনে বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: হেনা দাস’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় অংশ নেবেন করবেন ঝর্না রহমান এবং ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিরীণ আখতার।