যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে সরকারের অঙ্গীকারের সাযুজ্য দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকার ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2023, 11:44 AM
Updated : 25 May 2023, 11:44 AM

বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে ভিসায় কড়াকড়ি আরোপের যে ঘোষণা যুক্তরা্ষ্ট্র দিয়েছে, সেটাকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকারের প্রতি সমর্থনের প্রকাশ হিসেবে দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করার পর বৃহস্পতিবার এমন প্রতিক্রিয়া আসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে।

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তারা সেদেশে যাওয়ার ভিসা পাবেন না।

এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা বা কর্মচারী, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্লিংকেন বলেছেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।”

সংসদ নির্বাচনের এক বছরের কম সময় আগে ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি আসে।

এতে বলা হয়, “দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখতে সর্বস্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এই নীতিকে দেখতে চায়।”

Also Read: বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি: নির্বাচনে বাধা হলে মিলবে না ভিসা

Also Read: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে বিচলিত নয় সরকার: শাহরিয়ার

Also Read: ‘ওদের খবর আছে’, বললেন কাদের, খোকন দুজনই

Also Read: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ক্ষমতাসীনদের ভোটচুরির বিরুদ্ধে বড় বার্তা: আমীর খসরু

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকার ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল জাতি, যাদের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা রয়েছে।”

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী, গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার বিষয়গুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।

এই কাজটি আওয়ামী লীগ সরকার করে আসছে বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ।

তবে বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, “বাংলাদেশিরা তাদের গণতান্ত্রিক কার্যক্রম ও ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন। এখানে ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট কেড়ে নিয়ে কোনো সরকারের ক্ষমতায় থাকার নজির নেই।

“জনগণের ভোটাধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার একটি রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে। নিজেদের অধিকার আদায়ে নিরলস সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সভা-সমাবেশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয় সরকার।”

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারকে নিয়ে’ পরামর্শের ভিত্তিতে ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহারের মতো নির্বাচনী সংস্কারও করছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন যাতে পরিপূর্ণ স্বাধীনভাবে স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে, সেজন্য আর্থিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে।

নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে ‘যে কোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায়’ সরকার সচেষ্ট রয়েছে, সে কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

“সরকার সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সত্তার যে কোনো বেআইনি কার্যক্রম বা হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুত।“

এছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজর রাখার সুযোগ থাকার কথাও উল্লেখ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকারের প্রত্যাশা- সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ আর ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সচেষ্ট স্থানীয় অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সতর্ক থাকবে এবং সাংবিধানিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিপদে ফেলার বিভ্রান্তিকর চেষ্টা থেকে বিরত থাকবে।

“কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দেশের উন্নয়ন অর্জনকে টিকিয়ে রাখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণের।”

আওয়ামী লীগ সরকার তার মেয়াদে যেসব উন্নয়ন আর অর্জন লাভ করেছে, সেসবও তুলে ধরা হয় পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।

“এটি স্পষ্ট যে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন দেখছে জনগণ। এর ফলে দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে চরম দারিদ্র্য ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে এসেছে।

“এখন উন্নয়নের আন্তর্জাতিক রোল মডেল বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা উত্তরণে সক্ষম হয়ে উঠেছে। গত চৌদ্দ বছরে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হওয়ার কারণেই এসব অর্জন এসেছে।”