বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ীদের’ ভিসা না দেওয়ার যে নতুন নীতি যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং আন্দোলনে থাকা বিএনপির পক্ষ থেকে এসেছে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আন্দোলনের নামে’ যারা আগুন দিয়ে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে তাদের ‘খবর আছে’।
অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেছেন, তাদের নয়, ‘খবর আছে’ আওয়ামী লীগ সরকারের।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন কাদের ও খোকন। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে কথা বলেন।
দেশের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বুধবার বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা দেওয়া হবে না।
র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার দেড় বছর পর ভিসা নিয়ে ওয়াশিংটনের নতুন নীতির ঘোষণা এল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন বুধবার এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বার্থেই’ তাদের এ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে যারা এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে সমর্থন দিতে এই নীতি ঘোষণা করেছেন তিনি।
তার ভাষ্য, “এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে।”
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে, সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
“আপনি যখন বলছেন বাধার প্রশ্ন, আমাদেরও একটা কথা, নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদেরকে আমরা অবশ্যই প্রতিহত করব। বাধা প্রদানকারীর বিরুদ্ধে এখানে বক্তব্য আছে।
“আমার এখানে বলতে চাই, যারা নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনের নামে বাসে আগুন দেয়, বাস ভাঙচুর করে, এরাই একটা পলিটিক্যাল ভায়োলেন্সে আছে। কাজেই ওদের খবর আছে।”
পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, “আমাদের খবর নয়, খবর আছে আওয়ামী লীগ সরকারের। কারণ জনগণ ফুঁসে উঠেছে। জনগণ এবার দিনের ভোট রাতে করতে দেবে না ।”
তিনি বলেন, “দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে না দিয়ে তাদের শুভ বুদ্ধি উদয় হওয়া উচিত। বাংলাদেশ কি পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ও এক ঘরে হয়ে যাবে? পুরো পৃথিবী বয়কট করবে বাংলাদেশকে?”
যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, বাংলাদেশের জন্য যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, গণতন্ত্রের জন্য যে বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় এবং তারা যে কর্মকাণ্ডগুলো করেছে, নিষেধাজ্ঞার যে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, আমি মনে করি এটা যথার্থই করেছেন।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ দেশের জন্য ‘অত্যন্ত অবমাননাকর ও লজ্জাজনক‘ হয়েছে বলেও মনে করেন খোকন।
তিনি বলেন, “এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে, গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে।
“নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। যেটা ইতোমধ্যে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই চায় বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক।”
আগের নির্বাচনের প্রসঙ্গে তুলে তিনি বলেন, “২০১৪ সালে দেখেছেন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের ভোট রাতে হয়েছে। স্বয়ং সিইসি নুরুল হুদা বলেছেন, ইভিএম হলে দিনের ভোট রাতে হবে না। আশা করি, সরকার একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন বা তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে।”