মদের টাকা জোগাতে ইজিবাইক চালককে গলা কেটে হত্যা, গ্রেপ্তার ৪

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা সুইচ গিয়ার চাকু পেয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2023, 11:33 AM
Updated : 21 May 2023, 11:33 AM

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে এক ইজিবাইক চালককে হত্যার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, মদের টাকা জোগাড় করতে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় তারা তাকে হত্যা করে।

শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে পরিত্যক্ত একটি ইটভাটার ভেতর থেকে শাকিল নামের ওই ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার রাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন– মো. জনি (২০), শারাফাত (২০), ইব্রাহিম চান (২১) এবং সাব্বির হোসেন মেহেদী (২২)।

রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, শুক্রবার সকালে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে স্থানীয়রা গলাকাটা লাশ পড়ে থাকার বিষয়টি জানায়। পরে মঠবাড়ী পদ্মা রেলওয়ে সেতুর নিচে গিয়াস উদ্দিনের পরিত্যক্ত ইটভাটা থেকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

গ্রেপ্তারের সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা সুইচ গিয়ার চাকু, একটি অটোরিকশা ও ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক জব্দ করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, দশম শ্রেণির ছাত্র শাকিলের বাবা অনেক আগে মারা গেছেন। অসুস্থ মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে তার সংসার। বড় বোন সীমার (২৪) আলাদা সংসার রয়েছে।

“নিজের পড়াশুনা, মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ মেটাতে শাকিল স্কুল শেষে প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ইজিবাইক চালাত।"

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে শাকিল আর ফিরে আসেনি। পরের দিন তার গলাকাটা লাশ পাওয়া গেলে শাকিলের বোনের করা মামলার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অল্প সময়ের মধ্যে আসামিদের শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যায় জড়িত সবাই মাদকাসক্ত জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “গ্রেপ্তারের পর তারা সবাই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছে- মদের টাকা জোগাড় করতেই তারা হত্যার পরিকল্পনা করে।”

‘যেভাবে হত্যা করা হয়’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইব্রাহিম একটি অটোরিকশা নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাউটাইল ঘাটে অপেক্ষা করতে থাকে। পরে শারাফত ও জনি ঘাট এলাকা থেকে সামনে এগিয়ে গেলে সেখানে ইজিবাইকসহ শাকিলকে পায়। শাকিল জনির পূর্ব পরিচিত।

এই সুযোগে তারা শাকিলকে নিয়ে মঠবাড়ীর পরিত্যক্ত ইটভাটায় যায়। আর ইব্রাহিম অটোরিকশা নিয়ে পিছু নেয়।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছা মাত্র শারাফাত চাকু দিয়ে শাকিলের গলায় আঘাত করে। এতে শাকিল ইজিবাইক থেকে পড়ে যায় এবং গলা চেপে ধরে চিৎকার শুরু করে । তখন জানি পেছন থেকে শাকিলের পিঠে এলোপাতাড়ি চাকু মারতে থাকে।

কিন্তু তারপরও শাকিল চিৎকার ও দাপাদাপি করতে থাকায় জনি, সাব্বির ও ইব্রাহিম চান শাকিলের মাথা ও হাত-পা চেপে ধরে এবং শরাফাত সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে শাকিলের মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর শারাফত, জনি ও ইব্রাহিম অটেরিকশায় এবং সাব্বির শাকিলের ইজিবাইক নিয়ে চলে যায় বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।