ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে ওঠা স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আমলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এ অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে সংগঠনটি ঢাকায় সরকারি পানি উৎপাদন ও সরবরাহকারী কোম্পানিটির জবাবদিহিতা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার টিআইবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যম ও নির্ভরযোগ্য গবেষণায় ঢাকা ওয়াসায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে সেগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রের বরাতে সংগঠনটি বলছে, ঢাকা ওয়াসার পর্ষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে ও সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে সংস্থাটিকে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করার পাশাপাশি ওয়াসা বোর্ডকে অকার্যকর রাখার অভিযোগ এনেছেন।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা, অসদাচরণ এবং আইন অমান্যের অভিযোগ এনে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি চেন সংস্থার পর্ষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।
এর আগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিল ওয়াসার কর্মচারী ইউনিয়নগুলো। তার কয়েকদিন পর বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দিলেন বোর্ড চেয়ারম্যান। অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকেও।
ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দ্বন্দ্ব আগে থেকে চলছে। এ মাসের শুরুতে এক টিভি টক শোতে ওয়াসার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
পুরো বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিহীনতার প্রকট উদাহরণ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, “স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে ধারাবাহিকভাবে উত্থাপিত হলেও প্রতিকারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। অদৃশ্য শক্তির প্রভাব বলয়ে এই স্বেচ্ছাচারিতাকে জবাবদিহিতা না থাকার ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ।
“দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখন ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন এবং লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। ঢাকা ওয়াসাকে ঘিরে দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগসমূহ আর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বোর্ডকে অকার্যকর করা ও ওয়াসাকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত করার যে অভিযোগ খোদ বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছ থেকেই এখন জানা যাচ্ছে, তা ২০১৯ সালে টিআইবি প্রকাশিত ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফলেরই প্রতিফলন।“
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওয়াসায় দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ফলে জনগণকে যে প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারিতার ক্রমবর্ধমান মাশুল গুনতে হচ্ছে, তার প্রতিও টিআইবি তার গবেষণালব্ধ বিশ্লেষণ অনুযায়ী বিভিন্নভাবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ইফতেখারুজ্জামানের অভিযোগ, “বলা বাহুল্য, অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ওয়াসার গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না, অথচ ক্রমবর্ধমান চড়া দামে সরবরাহ করা নিম্নমানের পানি ফুটানোর অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। যার প্রতিকারের অন্যতম বাস্তবসম্মত উপায় ওয়াসার ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ। এর মধ্যে ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা নেই, যা হতাশাজনক।”