একেকবার একেক সিদ্ধান্ত আসছে। একবার করেও আবার নিবন্ধন করতে হচ্ছে। ছুটোছুটি করতে গিয়ে হয়রান মানুষ। আরও বিড়ম্বনা সংশোধনে।
Published : 18 Feb 2024, 12:31 AM
জন্ম নিবন্ধন নিয়ে একেক সময় সরকারের একেক সিদ্ধান্তে ভুগছে লাখো মানুষ। সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বাবা-মা জানতে পারছেন, তাদের নিবন্ধন করাতে হবে নিজের স্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে। সন্তানের বাবা ও মা দুটি ভিন্ন জেলার বাসিন্দা হলে সেই বিড়ম্বনা আরও বেশি।
ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তুলছেন, বর্তমান ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র করা গেলে জন্ম নিবন্ধন কেন করা যাবে না। আর নিবন্ধনের আবেদনে স্থানীয় ঠিকানা তো আছেই।
আবার কেউ যদি ঢাকাকে অস্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করে জাতীয় পরিচয়পত্র করে থাকেন, তাহলে কিন্তু তিনি এখানে নিবন্ধন করতে পারছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এক ঘটনায় দুই নীতি হতে পারে না।
শুধু স্কুলে ভর্তি নয়, চাকরিতে নিয়োগ, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ১৯টি ক্ষেত্রে জন্ম সনদ আবশ্যক। যে কারণে বছরজুড়ে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ নিতে ভিড় লেগে থাকে।
পদ্ধতি নিয়ে ধারণার অভাব, প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড় করতে না পারাসহ নানা সমস্যায় ঘুরপাক খাচ্ছেন জন্ম সনদ করতে যাওয়া ব্যক্তিরা।
ভোগান্তির আরেকটি দিক হল- একবার জন্মনিবন্ধন করা হলেও সেটি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে নিবন্ধন করাতে হচ্ছে। সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বাবা-মায়ের জন্ম সনদ তৈরি, সংশোধন করতে হচ্ছে।
এমনও দেখা যাচ্ছে কারও বাংলায় সনদ থাকলেও ইংরেজিতে নেই। কারও আবার ইংরেজি থাকলে বাংলা করা নেই। নিবন্ধনকারী কর্মীদের ভুলে সংশোধন করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে নাগরিকদের।
সংশোধনে অনলাইনে আবেদনের একটি পদ্ধতি আছে। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজ শেষ করতে পারে না ভুক্তভোগীরা।
সব ভুল আবার তৃণমূল পর্যায়ে সংশোধন করা যায় না, ইউনিয়ন পরিষদের ভুল সংশোধন করতে আসতে হয় উপজেলায়। সেটিও এক দিনে বা এক সপ্তাহে হবে, সেই নিশ্চয়তা নেই।
আবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যে জন্ম নিবন্ধন দিচ্ছে, সেটি গ্রহণ করছে না সরকারি অন্য সংস্থা। এতে যারা সেখান থেকে নিবন্ধন করিয়েছেন, তারা জানেন না এখন কী হবে।
নিবন্ধন করাতে বা সংশোধন করতে আসা লোকজন রাগারাগি করেন কর্মীদের সঙ্গে। এ কারণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও কয়েক মাস আগে রাগ ঝাড়েন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর উপস্থিতিতে।
গত ৬ অক্টোবর ঢাকায় একটি আয়োজনে তিনি বলেছিলেন, “আমরা যে গালি শুনছি সেই গালি যদি কোনো পাল্লার মধ্যে রাখা হয় সেই পাল্লা গালির লোড নিতে পারবে না। যে বদনাম নিচ্ছি আমরা। সেটা না আমরা নিতে পারব, না সরকার নিতে পারবে।”
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি (জন্ম নিবন্ধন) নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। সেটা সমাধান না হলে তো সমস্যা।”
তবে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে জটিলতাগুলোর বিষয়ে জানতে জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সবকিছু আইন অনুযায়ী করি। আমাদের আইনটা খুব স্পষ্ট, আপনাকে জন্ম নিবন্ধন স্থায়ী ঠিকানায় করতে হবে। ঠিকানাটা অথেনটিকেট করতে হবে।”
ছেলের নিবন্ধন ঢাকায়, বাবা-মাকে ছুটতে হবে এলাকায়
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে চরম বিরক্ত পশ্চিম ভাসানটেকের বাসিন্দা মামুন হোসেন।
স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়েছিলেন তিনি। জানতে পারেন, সন্তানদের নিবন্ধন করতে হলে আগে তার ও স্ত্রীর নিবন্ধন করাতে হবে। কিন্তু সেটি তারা করতে পারছিলেন না।
কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, অস্থায়ী ঠিকানায় তাদের জন্ম নিবন্ধন হবে না। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর ঠিকানায় করাতে হবে। কিন্তু প্রথমত তার বাড়ি যাওয়ার সময় বের করা কঠিন। দ্বিতীয়ত, এতে বেশ টাকা পয়সা খরচ হয়ে যাবে, যা তার ওপর চাপ তৈরি করেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মামুন বলেন, “অনেকদিন ধরে ঘুরতেছি কিন্তু করতে পারছি না। তারা বলছে আমি যেখানকার ভোটার সেখানে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন করাতে হবে। আমি একটি চাকরি করি। গেলে একদিন-দুই দিনে জন্মনিবন্ধন করা যায় না। এত ছুটি তো পাব না, এখন এটা নিয়ে নোয়াখালী দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।”
পুত্রবধূর জন্ম নিবন্ধন করাতে আসা দেওয়ানপাড়ার গৃহিণী হামিদা বেগমের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন কুমিল্লায়। নাতির স্কুলে জন্ম নিবন্ধন চেয়েছে। এজন্য ছেলে ও ছেলের বউয়ের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
তিনি বলেন, “ছেলেরটা করাতে পারছি। কিন্তু ছেলের বউয়ের জন্ম নিবন্ধন না কি এখান থেকে করানো যাবে না। তার বাপের বাড়ির ঠিকানা থেকে করতে হবে। বিয়ের পর থেকে এটাই তো তার স্থায়ী ঠিকানা।”
অর্থাৎ পদ্ধতিটা এমন যে, সন্তানের জন্ম যদি ঢাকায় হয় এবং তার বাবার বাড়ি যদি হয় পঞ্চগড়ে এবং মায়ের বাড়ি যদি কক্সবাজার হয়, তাহলে সেই সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে হলে তার বাবাকে পঞ্চগড় এবং মাকে যেতে হবে কক্সবাজার।
৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আসা শিউল আক্তার জানালেন, সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া তার তিন সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে বলেছে স্কুল থেকে। আবেদনের পর এক সপ্তাহেও সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।
শিউলি বলেন, “স্কুল থেইকা এই মাসের মধ্যে সার্টিফিকেট জমা দিতে কইতাছে। যদি না দিই তাহলে বাচ্চাদের বাইর কইরা দিব। বাচ্চাদেরটা বানাইতে গিয়া আমাদের দুইজনের জন্মনিবন্ধন বানানো লাগতেছে। আমাদের দুইজনেরটাই অহনো হাতে আহে নাই। আমাদেরটা না বানাইয়া তো বাচ্চাদেরটা বানানো যাবে না। খুব ঝামেলা হইয়া গেল।”
নিবন্ধন করা, তবে হদিস নেই
ঢাকা উত্তরের ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে আসা হুমায়ুন কবিরের দুই সন্তান পড়ে মিরপুর বাংলা স্কুলে। তাদের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে তার নিজের ও স্ত্রীর নিবন্ধন লাগবে শুনে কিছুটা নির্ভার ছিলেন। কারণ, তার নিবন্ধন করা ছিল। কিন্তু পরক্ষণেই তার স্বস্তি উবে যায়। নম্বর দিয়ে তার জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, “বলে পুরানডা দিয়া চলব না। প্রথমে আমাদেরটা বানাইছি। বাচ্চাদের মধ্যে একজনের জন্ম নিবন্ধন হয়েছে। আরেকজনেরটা বাংলায় আছে সেটা আবার ইংরেজিতে করতে হবে।”
নিবন্ধন করা সনদের কপি অনলাইনে না পাওয়ার পেছনে নাগরিকদের কোনো দায় নেই। ২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করাতে হবে। মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যেও স্বজনদেরকে মৃত্যুসনদ সংগ্রহের কথা বলা হয়।
শুরুতে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন সরবরাহ করত। ২০০৬ সালে এসে অনলাইন নিবন্ধন সনদ দেওয়া শুরু হয়। ২০১১ সালের নভেম্বরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নতুন ওয়েবসাইট (https://bris.gov.bd) ও সার্ভার চালু করা হয়, যার কার্যক্রম শুরু হয় ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে।
এ সময় অনেকেই পুরোনো জন্ম নিবন্ধন সনদ নতুন ওয়েবসাইটে যুক্ত করে নেন। কিছু ইউনিয়ন পরিষদ আগের হাতে লেখা সনদের তথ্য ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করে। তবে বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদ এসব তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি। সেগুলো এখন আর সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না।
আগের ওয়েবসাইটটি ২০২০ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ফের নতুন ওয়েবসাইট (https://bdris.gov.bd/) চালু হয়। এখানেও স্থানীয় সরকারের কর্মীরা জন্ম নিবন্ধনের তথ্য তোলেনি। এখন তাই নতুন করে নিবন্ধনের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে মানুষকে।
কোথাও তথ্য তোলা হলেও তাতে ভুল হয়েছে। সেই তথ্য সংশোধন করতে গিয়ে আরেক চক্করে মানুষ।
নতুন জন্ম নিবন্ধন করানো এবং পুরোনোটি সংশোধন করতে এসে ভোগান্তির কথা জানালেন নাসরিন জাহান।
তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে গত বছর জরায়ু ক্যান্সারের টিকা দিতে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন পড়ে। সে সময় দুই মাস জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। নিবন্ধন আবার শুরুর পর তারা আবেদন করেন। তখন তাদের বলা হয়, স্বামী-স্ত্রীর জন্ম নিবন্ধনও লাগবে।
“আমারটা ২০১০ সালে করেছি। এটাতে আমার বাবাকে মৃত বলা হয়েছিল। নতুন নিয়মে ‘মৃত’ লেখা যাবে না। সেজন্য সংশোধন করাতে হবে। আমার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে দুই সপ্তাহ লেগেছে। আমার মেয়েরটা তিন সপ্তাহ আগে জমা দিয়ে গেছি। আজ খোঁজ নিতে এসেছি হয়েছে কি না।”
মেয়র আতিকুল ক্ষোভ জানানোর পর আঞ্চলিক কার্যালয়ের বদলে নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু সনদ দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সনদে ভুল হলে ওয়ার্ড পর্যায়ে সবগুলো সংশোধন করা যায় না।
বাংলা ও ইংরেজি নিয়ে জটিলতা
একবার করা জন্ম নিবন্ধন আরেকবার করতে হচ্ছে সরকারের নীতিমালার কারণে। আগের জন্ম নিবন্ধন বাংলা অথবা ইংরেজি দুটি ভাষায় ছিল।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে একটা জন্ম নিবন্ধনেই বাংলা ইংরেজি দুই ভাষাই থাকছে। এ অবস্থায় যাদের জন্ম সনদ ইংরেজিতে করা ছিল তাদেরগুলো সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস বাংলা করে দিয়েছে, বাংলাটা ইংরেজি করে দিয়েছে। এটা করতে গিয়ে অনেকের নামের বানান, ঠিকানা ভুল করা হয়েছে।
এই ভুল সংশোধন করতে গিয়ে ছুটোছুটি এক ভোগান্তি, আরেক ভোগান্তি হল এর আগে কেবল একটি ভাষায় করা জন্ম নিবন্ধন এখন গ্রহণযোগ্য না। বাংলা, ইংরেজি দুটোই চাচ্ছে।
ছেলের জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে এই হয়রানিতে পড়তে হবে, সেই ধারণা ছিল না সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের একডালা গ্রামের বাসিন্দা আরিফুর রহমানের। কারণ, তার ও স্ত্রীর নিবন্ধন সনদ আছে। কিন্তু সেই সনদ স্কুল নেয়নি। তারা একই সঙ্গে বাংলা ও ইংরেজিতে তাদের জন্ম সনদ চেয়েছে। সেটি যোগাড় করতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা।
আরিফ বলেন, “আমি ঢাকায়, স্ত্রীকে পাঠিয়েছি গ্রামে। ইউনিয়ন পরিষদে গেলে বলল নেট নাই, সার্ভার নাই। বাপ-মায়ের ভোটার আইডি কার্ড লাগবে। ভোটার আইডি কার্ড দেওয়ার পর তারা বলছে ইন্টারনেট নাই। আসলে করে দেব। পরে আবার গেলে বলেছে এখন হবে না, পরে আসেন, করে দেব।”
সনদ দিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ, গ্রহণ করছে না কেউ
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধক রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পেতে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ২০২৩ সালে তিন মাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই কার্যক্রম বন্ধ রাখে। নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে গত ১ অক্টোবর থেকে আবার শুরু হয় এই কার্যক্রম। করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ডিএসসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে এসব সনদ দেওয়া হচ্ছে।
অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েছে তারা। কিন্তু এই সনদ জমা নিচ্ছে না কোনো সংস্থা। কারণ, সরকারের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারটি যুক্ত না। ফলে তাদের দেওয়া জন্ম সনদগুলো সরকারি সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকার একটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিআরসির সার্ভার আমাদের পাসপোর্টের সার্ভারের সঙ্গে লাইভ কানেক্টেড। কিন্তু যে সার্ভার থেকে ডিএসসিসি জন্ম সনদ দিচ্ছে সেটা আমাদের সার্ভারে পাই না। এজন্য ওই সনদ নিয়ে আসা কাউকে পাসপোর্ট দিতে পারছি না।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা চলছে। আমরা এরই মধ্যে সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গেও এ নিয়ে আলাপ হয়েছে। আশা করছি এটি সমাধান হয়ে যাবে।”
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা সিটি করপোরেশন আলাদা জন্ম নিবন্ধন করলেও সেগুলো ন্যাশনাল সার্ভারে পোস্টিং দিতে হবে, নইলে নিবন্ধন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।”
যারা সেখানে জন্ম নিবন্ধন করে বিপাকে পড়েছেন, তাদের কী হবে, সে প্রশ্নের জবাব অবশ্য নেই কারও কাছে।
আরেক কাহিনী সংশোধনে
ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের অপরাজিতা তৃষ্ণার (ছদ্ম নাম) জন্ম নিবন্ধন করা হয় ২০২০ সালের মার্চে। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণী পরিবারের সঙ্গে এখন জার্মানিতে থাকেন। ই-পাসপোর্ট নিতে জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করতে গিয়ে দেখতে পান তার মায়ের নামের ইংরেজি বানান ভুল। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রিন্ট কপিতে নাম ঠিক আছে। পরে দেখা যায় অপরাজিতার নিজের বাংলা বানানও ভুল করা হয়েছে।
এই তরুণীর বাবা বলেন, “আমি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ের সার্ভারে গিয়ে সংশোধনের আবেদন করার চেষ্টা করেছি অন্তত ১৫ বার। প্রতিবারই ওটিপিতে এসে আটকে যাই। বিদেশি ফোন নম্বর নেয় না, পরে আমি ঢাকায় আমার এক আত্মীয়কে দিয়ে আবেদন করিয়ে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করেছি। সে আমাকে কপিটা স্ক্যান করিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।
“আমি প্রযুক্তিও ভালো বুঝি। আমার জন্যই ব্যাপারটা যদি এত জটিল হয় তাহলে ঢাকার বাইরে থাকে অথবা বিষয়গুলো ভালো বোঝে না তাদের কী অবস্থা! এই ডিজিটাল যুগে এসেও শুধু মোবাইলেই ওটিপি পাঠাতে হবে? আমি কেন ঘরে বসেই সব কাজ করতে পারব না?”
নরসিংদীর নুরালাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নাসরিন আকতারের ছয় বছর বয়সী মেয়ের জন্ম নিবন্ধনে ভুলে ‘পুরুষ’ এসেছে। সেটা সংশোধন করতে ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করেন।
এক সপ্তাহ পর তাকে জানানো হয়, এ ধরনের সংশোধন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা যাবে না, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যেতে হবে।
নাসরিন বলেন, “জন্ম নিবন্ধনের সময় ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে টাইপিংয়ে ভুল করেছিল। এখন আমাকে কেন উপজেলায় দৌড়াতে হবে?”
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আরিফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের ছোটখাট ভুল সংশোধন সুবিধা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাখলে ভালো হয়।
“কারও জরুরি প্রয়োজন হলে তাকে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়। সুযোগ দিলে এসব ভুল আমরাই সংশোধন করতে পারি। কিন্তু অনেকে আবার এটার অপব্যবহার করে। বয়স বাড়ায়-কমায়, আমাদের কিছু লোকের জন্যই ভালো ভালো মানুষ বিপদে পড়ে।”
নিয়মটাও বিদঘুটে। জন্ম ও মৃত্যু সনদে কোনো ভুল হলে সেটি সনদ দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ইউনিয়ন এবং সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা সংশোধন করতে পারবে।
তবে সনদ নেওয়ার ৯০ দিন পর আবেদন করলে সেই আবেদন জেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিটি করপোরেশন পর্যায়ে জেলা প্রশাসক নিষ্পত্তি করবেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম দাবি করছেন, সংশোধনের দায়িত্ব তৃণমূলে দিলে ঝামেলা বাড়বে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইউনিয়নে সুযোগ থাকলে একটা লোকের বয়স কম থাকলে বাড়িয়ে দেবে, বেশি হলে কমিয়ে দেবে। বাবার নাম, স্বামীর নাম পরিবর্তনসহ অনেক ধরনের জটিল বিষয় আছে। এজন্য এই বিষয়গুলো একটা রিজনেবল কম্পিটেন্ট অথরিটির কাছে রাখা উচিত।”
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে ভোগান্তি: জনগণের ‘গালি খেয়ে’ মেয়র আতিকুলের ক্ষোভ
শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনে ৫০০ টাকা পুরস্কার
জন্ম নিবন্ধনে জালিয়াতি: ১৮টির মধ্যে ১৭টির ঠিকানা ভুয়া
তথ্য ফাঁস: নাম এল জন্ম নিবন্ধনের সাইটের, রেজিস্ট্রার জেনারেলের অস্বীকার