“আমরা যে গালি শুনছি সেই গালি যদি কোনো পাল্লার মধ্যে রাখা হয় সেই পাল্লা গালির লোড নিতে পারবে না। যে বদনাম নিচ্ছি আমরা। সেটা না আমরা নিতে পারব, না সরকার নিতে পারবে।”
Published : 06 Oct 2023, 09:29 PM
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সেবা নিতে এসে মানুষের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। মানুষের ‘গালি খেতে খেতে’ বিরক্ত হয়ে তিনি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ের শীর্ষ ১০ কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর পত্রিকায় দেওয়ার দাবিও তুলেছেন।
মেয়র বলেছেন, “ মোবাইল নম্বর দিলে তখন দেখা যাবে কত কল আসে।”
জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সভায় রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের ওপর এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। স্কুলে ভর্তি, টিকা দান, কারও মৃত্যুর পর স্বামী বা স্ত্রীর পেনশন স্থানান্তরসহ নানা কাজে এটি বাধ্যতামূলক। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই নিবন্ধন করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে মানুষ।
নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত আদায় এক সাধারণ অভিযোগে পরিণত হয়েছে। এর প্রতিকারে কখনও নেওয়া হয়নি উদ্যোগ। কিন্তু এখন অতিরিক্ত টাকা দিয়েও নিবন্ধন সনদ পাওয়া যাচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, কখনও সার্ভার বন্ধ থাকছে, কখনও থাকছে ধীরগতির।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর প্রকাশ করার দাবি করে মেয়র আতিকুল বলেন, “লিখে দেন, জন্মনিবন্ধনে সমস্যা হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। দেখেন কত ফোন আসে, কত ব্যথা আপনি পান, কত গালি খান।
“সার্ভার ডাউন হলে আমাদের লোক যখন আপনাদের ফোন করে কেউ ফোন ধরেন না। মনের দুঃখ থেকে কথাগুলো বলছি, গালি খেতে খেতে বলছি।”
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে রেজিস্ট্রার জেনারেল রাশেদুল হাসানসহ কর্মকর্তারা ছিলেন।
মেয়র বলেন, ‘নানা ধরনের কাজে নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দিতে হয়। এটি ছাড়া একদিনও চলা সম্ভব না। কিন্তু জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয় এই কাজটি ঠিকমতো করতে পারছে না।
“কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হয় রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস এই কাজটি ঠিকমত করতে পারছে না। এর প্রমাণ আমার কাউন্সিলররা, সিটি করপোরেশনের অফিস, তার প্রমাণ আমি নিজে।”
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে ভোগান্তির শিকার হওয়া লোকজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার মোবাইলে কল করেন জানিয়ে আতিকুল বলেন, “তারা অভিযোগ করেন, যখনই জন্ম নিবন্ধনের কোনো কাজের জন্য যাচ্ছেন তখনই বলা হচ্ছে সার্ভার ডাউন।
“আজকে বলা হয়েছে সার্ভার ডাউন না। তাহলে সার্ভার স্লো, আমাদের যে ক্যাপাসিটি এবং ক্যাপাবিলিটি আছে সেটি কিন্তু সার্ভারের মধ্যে নাই।”
এত বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই কথাগুলো বলতে ভালো লাগছে না জানিয়ে মেয়র বলেন, “কিন্তু সত্যকে সত্যই বলতে হবে। বিষয়টির ওপর সরকারের ইমেজ নির্ভর করছে।
“সেখানে সরকারের ইমেজ নির্ভর করে সেখানে কেন শর্টেজ থাকবে? আমরা কোনো জায়গায় সার্ভিস দিতে পারছি না।”
জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সরিয়ে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু সেখানে এই সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে গালি খেতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে।
“পাসওয়ার্ড দিয়ে ক্লিক করলে সার্ভারে কিছু আসে না। গালি খেতে হয় আমাদের।”
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দিয়ে ডিএনসিসি গত বছর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয় করে দিয়েছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন পেয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
“টাকা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কিন্তু আমরা যে গালি শুনছি সেই গালি যদি কোনো পাল্লার মধ্যে রাখা হয় সেই পাল্লা গালির লোড নিতে পারবে না। যে বদনাম নিচ্ছি আমরা। সেটা না আমরা নিতে পারব, না সরকার নিতে পারবে”,বলেন তিনি।
রেজিস্ট্রার জেনারেলকে উদ্দেশ করে মেয়র বলেন, “রেজিস্ট্রার জেনারেল সাহেব আপনি স্বীকার করুন যে আমাদের সমস্যা আছে। আপনার কথায় সব ঠিক আছে, ঠিক আছে, ঠিক আছে। তাহলে কেন এত সমস্যা? আপনারা সার্ভারের ক্যাপাসিটি বাড়ান।”
এ সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বলেন, “স্পষ্ট করে জানাতে হবে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে।
“আজ এখানে তিক্ত কথা হয়েছে। তিক্ত কথা হওয়ায় সমস্যা সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এখানে বিষয়গুলো উত্থাপিত হয়েছে, আলোচনা হয়েছে। এটা ভালো হয়েছে।”