ভুল পদ্ধতির কারণে ঢাকায় মশা নিধন হয়নি: আতিক

যুক্তরাষ্ট্রে মশা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতার পর এমন উপলব্ধি তার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2023, 03:11 PM
Updated : 21 Jan 2023, 03:11 PM

ঢাকায় মশা নিধনে ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তার ভাষ্য, যে কারণে মশা নিয়ন্ত্রণের বদলে অর্থের অপচয় হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে মশা নিধন বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার পর তার এমন উপলব্ধির কথা শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণে বর্তমানে মিয়ামিতে অবস্থান করছেন মেয়রের নেতৃত্বে ডিএনসিসির একটি প্রতিনিধি দল। শুক্রবার সেখানে মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তারা হাতে কলমে একটি কর্মশালায় অংশ নেন।

শনিবার এ বিষয়ে মেয়রের বক্তব্য দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে মেয়র আতিকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে।

মিয়ামিতে মশা নিধনের কার্যক্রম এবং সেখানকার সফলতা দেখার পর তার মনে হয়েছে ঢাকায় ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে, যে কারণে ‘মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির কার্যক্রম তেমন সফল হচ্ছে না’।

কর্মশালায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারা মশার প্রজাতি নির্ণয় করে সে অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করেন। এতে মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। মিয়ামিতে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশা রয়েছে। মিয়ামির আবহাওয়া ঢাকার মতই। সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। মাঝে মাঝে ভারি বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে।

ফলে এইডিসবাহিত ডেঙ্গুসহ সব ধরনের মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারত সেখানে। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখছে মিয়ামি ড্যাড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

এইডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ে ২০১৯ সালে ব্যাপকভাবে ভুগেছে ঢাকাবাসী, প্রাণহানিও হয়েছে পৌনে তিনশত জনের। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে আবার নতুন করে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এ রোগের। বর্ষা পেরিয়ে বৃষ্টি হওয়ায় বছরের শেষ দিকে মারাত্মক রূপ নেয় ডেঙ্গু। জুলাই থেকে পরের মাসগুলোতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আগের মাসগুলোকে ছাড়িয়ে যায়। নভেম্বরে এসে ২০১৯ সালের মৃত্যুর সংখ্যাকেও পেছনে ফেলে।

মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় তখন সিটি করপোরেশন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এইডিস মশার লাভা নিয়ন্ত্রণে প্রচারণার পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

শুক্রবার মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের পর মেয়র আতিক বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের সফল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে ডিএনসিসি।

“আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই অতি দ্রুত ডিএনসিসি মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করতে চাই। মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে সেটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে মশক মুক্ত রাখতে চাই।”

তিনি জানান, দেশে ফিরে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের কীটত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করা হবে।

“তারা আসলে কীভাবে সফল সেটি কীভাবে ঢাকাতে প্রয়োগ করা যায় তার কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।”

ডিএনসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সফরকালে মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির অভিজ্ঞতা হাতে কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন ও কর্মশালায় নানা তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন তারা।

মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনে সহায়তা করেন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অপারেশন ম্যানেজার উসিক উনলু ও পরিচালক ড. উইলিয়াম ডি পেট্রি।

আরও পড়ুন:

Also Read: ডেঙ্গু চিকিৎসা: খরচের খাতায় বাড়তি চাপ

Also Read: ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু আগে দেখেনি বাংলাদেশ

Also Read: ডেঙ্গু: সময় ও উপসর্গে পরিবর্তন ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের

Also Read: বিমানবন্দরে মশা তাড়াতে গাপ্পি মাছ, গাঁদা আর তুলসি

Also Read: ঢাকার ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা

Also Read: এডিস মশা ঠেকাতে ছাড়া হচ্ছে দুই কোটি মশা