ঢাকার ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে পরিচালিত সমীক্ষায় ২৭টি ওয়ার্ড ডেঙ্গু রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2022, 10:57 AM
Updated : 21 Sept 2022, 10:57 AM

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সমীক্ষায়।

গত মাসে দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডে পরিচালিত ওই সমীক্ষায় ২৭টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বুধবার মশা নিয়ে বর্ষাকালীন জরিপের এই ফলাফল জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম।

গত ১১-২৩ অগাস্ট ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৮টি ওয়ার্ডে ওই জরিপ চালানো হয়। এর আওতায় ১১০টি সাইটের ৩ হাজার ১৫০টি বাড়ি পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ দল।

নাজমুল ইসলাম বলেন, এসব বাড়ির মধ্যে ৩৯২টি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যা শতকরা ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির ২১৫টি ও উত্তর সিটির ১৭৭টি বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৭৫৮টি বাড়িতে এইডিস মশার কোনো লার্ভা পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, উত্তর সিটির ১৩টি ও ডিএসসিসি এলাকার ১৪টি ওয়ার্ড, অর্থাৎ মোট ২৭টি ওয়ার্ডে এইডিস মশার উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি পাওয়া গেছে।

  • কোনো এলাকায় এইডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে। এই ইনডেক্স ২০ এর বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়।

  • এই বিচারে ঢাকা উত্তরের ১, ১১, ১৪, ১৬, ১৯, ২০, ২১, ২৪, ২৮, ৩৩, ৩৪, ৩৫ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ওয়ার্ডের আওতায় রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, মহাখালী, বনানী, গুলশান, বাড্ডা, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর এলাকা পড়েছে।

  • আর ঢাকা দক্ষিণের ৭, ৮, ১১,১২, ১৩, ১৪, ২৪, ৩৪, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪২, ৪৮ এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ড ঝুকিপূর্ণ। এসব ওয়ার্ডের অবস্থান মানিকনগর, খিলগাঁও, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, শান্তিনগর, হাজারীবাগ, লালবাগ, সিদ্দিকবাজার, কাপ্তানবাজার, ওয়ারি, সুত্রাপুর এবং যাত্রাবাড়ী এলাকায়।

  • উত্তরের ১৪টি এবং দক্ষিণের ২২টি ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ১০ এর বেশি। ১০ এর কম ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে উত্তরের ১২ এবং দক্ষিণের ২১ ওয়ার্ডে।

Also Read: ডেঙ্গু ফের সারা দেশে ছড়াচ্ছে

Also Read: এ বছর ডেঙ্গু রোগী ১২ হাজার ছাড়াল

Also Read: বছর জুড়ে ডেঙ্গু, ঢাকার বাইরে বাড়ছে প্রকোপ

নাজমুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে নির্মাণকাজ বেড়ে গেছে, বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বর্ষাকালে এইডিস মশার বংশ বৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সে কারণে জরিপে এই চিত্র এসেছে।

“বিভিন্ন বাড়ির প্লাস্টিকের ড্রাম, বালতি, জলাবদ্ধ মেঝে, ফুলের টবে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পানির ট্যাংক, পরিত্যক্ত টায়ার, ছাদবাগান এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আমরা মশার লার্ভা পাইনি।

“এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।”

গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বছরের শুরু থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১২ হাজার ৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের।

জেলায় জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামে গঞ্জে এই রোগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা সেভাবে তৈরি না হওয়ায় ঢাকার কাইরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৯ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ বছর এ পর্যন্ত যে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৪ জনই ঢাকার বাইরের।

এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সরকারি হিসাবে সেবার মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর,ডেঙ্গুর চিকিৎসায় জাতীয় গাইডলাইন প্রস্তুতকারী দলের প্রধান ডা. কাজী তরিকুল ইসলামসহ সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।