ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু আগে দেখেনি বাংলাদেশ

এইডিস মশাবাহিত এই রোগে এই প্রথম মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়াল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2022, 12:20 PM
Updated : 13 Nov 2022, 12:20 PM

বাংলাদেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে, সেবার রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়ানোর সঙ্গে মারা গিয়েছিল ১৬৪ জন। ২০২২ সালে এসে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা এখনও অর্ধ লক্ষ না ছাড়ালেও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ২০০।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোববারের বুলেটিনে আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে এইডিস মশাবাহিত এই রোগে তিনজনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। তাদের নিয়ে এই বছরে এই পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২০২ জন।

এই শতকের শুরুতে দেশে ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়তে শুরু করলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হিসাব শুরু করে অনেক পরে।

তাতে ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ২৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। ২০০০ সালে মারা যায় ৯৩ জন।

মাঝে ২০১৯ সালে ২৬৩টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১৬৪টি ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সম্প্রতি অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯ সালে মৃতের সংখ্যা ১৭৯ বলে উল্লেখ করা হয়।

তবে এর যে কোনো সংখ্যা ধরলেও ২০২২ সালে মৃত্যু আগের সব হিসাব ছাড়িয়ে গেল।

অধিদপ্তরের হিসাবে শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে ধরা হয় বলে হাসপাতালের বাইরে কারও মৃত্যু হলে তা এই হিসাবে আসছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোববারের বুলেটিনে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৮৫৯ জনের হাসপাতালে যাওয়ার খবর দেওয়া হয়েছে। তাতে এ বছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৫২৯ জনে।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এই সংখ্যাও ২০১৯ সালের পর সর্বাধিক। ২০১৯ সালে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪।

গত একদিনে শনাক্ত রোগীদের ৪২৬ জন ঢাকায় এবং ৪৩৩ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ১৮৯ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৮৮৫ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে আছে ১ হাজার ৩০৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ২০০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৫৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৭ জন, খুলনা বিভাগে ৪৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৬২ জন, এবং সিলেট বিভাগে ৭ জন।

সারাদেশে এ পর্যন্ত যে ২০২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, তাদের মধ্যে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলায় একজন, মানিকগঞ্জ জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৫১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন, খুলনা বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬ জন এবং বরিশাল বিভাগে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে।

বর্ষাকাল এলেই ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এইডিস মশার উৎপাত বাড়ে। এ সময় এই মশার দংশনে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। তবে এ বছর এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে।

এ বছর অক্টোবর মাসেই সবচেয়ে বেশি ২১ হাজার ৯৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিল মাসে ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন, জুন মাসে ৭৩৭ জন, জুলাই মাসে ১ হাজার ৫৭১ জন, অগাস্ট মাসে ৩ হাজার ৫২১ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৯ হাজার ৯১১ জন রোগী গেছে হাসপাতালে।

সর্বাধিক ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে অক্টোবর মাসেই। এ ছাড়া জুন মাসে ১ জন, জুলাই মাসে ৯ জন, অগাস্ট মাসে ১১ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এইডিস মশাবাহিত এই রোগে।