রানা প্লাজা ধসের পরে শ্রম আদালতে করা মামলাগুলো পরিচালনার জন্য সরকার এখনও ‘আইনজীবি নিয়োগ করেনি’, বলেন সারা হোসেন।
Published : 24 Apr 2025, 11:15 PM
রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার না হওয়া এবং হতাহতরা ‘যথাযথ’ ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ।
শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি সংস্কারকে ক্যানসার চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারের বদল মলম দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। আকাশ বলেন, “এখনও তাই হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা’ শীর্ষক এই কনভেনশনে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের এক যুগ উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা’ শীর্ষক এই কনভেনশন আয়োজন করে।
অধ্যাপক আকাশ বলেন, “শ্রমজীবি শ্রেণির প্রাণের দাম পুঁজিপতির কাছে খুবই কম। না হলে, আমাদের বড় আন্দোলনে কতজন ছাত্র-যুবক মারা গেলেন, তাদের ক্ষতিপূরণ পেতে দেরী হয়েছে?
“তাদের ক্ষতিপূরণ খুব দ্রুত হয়ে যাওয়ার কারণ তাদের শ্রেণি আলাদা। তাদের লোক এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে।”
তিনি বলেন, “শ্রমিক শ্রেণির অধিকার শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত হয়েই আদায় করতে হবে। উচ্চতর শ্রেণি তখনই আপনার কথায় কান দেয়, যখন আপনি একটু নড়েচড়ে বসেন। তার আগে পর্যন্ত যেটা হয়, সেটা হল সংস্কার।
“সংস্কার জিনিসটা কেমন, যেমন সংস্কার করে ক্ষতিপূরণের মাত্রা শ্রমিক প্রতি ১ লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। যেটুকু করলে, যেখানে ক্যান্সার, যেটার দরকার অপারেশন, সেখানে মলমের ব্যবস্থা করা। এখনও তাই হচ্ছে। বস্তা বস্তা পুস্তক লেখা হবে সংস্কারের নামে। অথচ মূল বিষয় হল- সেগুলো আপনার জীবনের জন্য কার্যকরী হচ্ছে কি না?”
রানা প্লাজা ধসের মামলা ১২ বছর ধরে চলছে, কিন্তু বিচার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন অর্থনীতির সাবেক এই শিক্ষক বলেন, “রানা প্লাজা ধসের পর সবার একটা দয়া-মায়া কাজ করেছে, সবাই খুব ভালো হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী একটা তহবিল করেছিল, বিভিন্ন লোক গিয়ে টাকা দিয়ে ছবি তুলেছে। সেই ঘটনার বিচার কিন্তু হয় নাই।
“সোহেল রানা বাদে বাকি ১৪ জনকে, যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের কিন্তু জামিন দিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে কি না, বিচার আর হবে কি না আমরা জানি না।”
রানা প্লাজা ধসের পর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে একটি কমিটি গঠনের আদেশ দেওয়ার কথা তুলে ধরে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, “কমিটি করা হল, ওনাদের কাজ সম্পন্ন করেছেন এক দশক আগে। শুরুতে কোর্টের যে অবস্থা দেখলাম, তারপর যেকোনো কারণে সেটা আর দেখিনি।”
রানা প্লাজা ধসের পরে শ্রম আদালতে সরকারের করা মামলাগুলো পরিচালনার জন্য সরকার এখনও ‘আইনজীবি নিয়োগ করেনি’ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনাদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা উচিৎ বিষয়গুলো কারা দেখছে?”
কনভেনশনে ধারণাপত্র পাঠ করেন ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী।
আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব বুলবুলের সঞ্চালনায় সেখানে বক্তব্য রাখেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন।