কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দেওয়া সম্ভব না বলে দেশটির হাই কমিশনার আইনমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
Published : 01 Nov 2022, 09:47 PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে সে দেশের আইনি কাঠামোতে ফেরানো সম্ভব না হলে ‘বিকল্প পথ’ খুঁজতে দেশটির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে কানাডার হাই কমিশনার লিলি নিকোলস সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ অনুরোধ জানান বলে আইন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আইনমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সেখানে বলা হয়, “বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দেওয়া সম্ভব না বলে হাই কমিশনার জানিয়েছেন।
“আমি তাদের অনুরোধ করেছি, বিকল্প পন্থা বের করা যায় কি না। তাকে (লিলি নিকোলস) বলেছি- একজন খুনিকে আশ্রয় দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
একদল সেনা কর্মকর্তা এই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিলেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছিল। খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তাদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
আপিলের রায়ে ওই ১৫ জনের মধ্যে তিনজন খালাস পান। যে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে উচ্চ আদালত, তাদের একজন আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান বলে খবর আসে।
বাকি ১১ জনের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন বন্দি অবস্থায় আদালতে রিভিউ আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়।
এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ওই পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয় ঢাকার কারাগারে। বাকি ছয়জন পলাতক থেকে যান।
তার প্রায় ১০ বছর পর ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ভোরে পলাতক ৬ জনের একজন ৭২ বছর বয়সী মাজেদকে ঢাকার গাবতলী থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় সরকার।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়ে গেলে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বর্তমানে পলাতকদের মধ্যে নূর কানাডায় এবং রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। বাকিদের অবস্থান শনাক্ত হয়নি। সবাইকে দেশে ফেরানোর চেষ্টায় ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিস জারি করা হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যা: এখনও অধরা ৫ খুনি
মঙ্গলবার হাই কমিশনারের সঙ্গে আলোচনায় নূর চৌধুরীকে ফেরানোর আইনি দিক উঠে আসার কথা জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, “আমি হাই কমিশনারকে অনুরোধ করেছি, যেসব আইন ও বিধিবিধান আছে তা যদি পর্যবেক্ষণ করে দেখি, তাহলে কানাডা যাতে তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে সে পন্থা খুঁজতে পারে। হাই কমিশনার বলেছেন, কানাডা সরকারকে বিষয়টি তিনি জানাবেন৷”
আইন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাই কমিশনার জানতে চেয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ‘অ্যালাউ’ করবে কি না?
“এ প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে জানান, এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন করা। সেখানে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশ সরকার বদ্ধপরিকর যে, বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেটা সুরক্ষা আইনের বিষয়ে হাই কমিশনারকে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনের খসড়া প্রণয়নের ব্যাপারে অংশীজনদের সঙ্গে একবার সভা হয়েছে। আরও ২-৩ বার সভা হবে। ডেটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ আইন করা হবে না, ডেটা ‘সুরক্ষার জন্য’ করা হবে।