সাবেকদের সঙ্গে বুধবার মতবিনিময়ে বসছে ইসি।
Published : 19 Oct 2022, 01:39 AM
দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে সাত মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার সাবেক সহকর্মীদের পরামর্শ চাইছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন কমিশন।
গাইবান্ধা উপ-নির্বাচন বন্ধের পরই অভিজ্ঞতা বিনিময়ের এমন উদ্যোগ নিলেন তারা। আর এ উদ্যোগে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, সচিব পর্যায়ের ২৮ জনকে বুধবার ইসিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এই সভায় আমন্ত্রণ পাওয়া সাবেকরা বলছেন, আগামী নির্বাচন করার আগে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার কোথায় সমস্যা রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে, আর অনিয়মে সম্পৃক্তদের বিষয়েও কঠোর হতে হবে।
গত সাড়ে সাত মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, গাইবান্ধা-৫ সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচন, জেলা পরিষদের নির্বাচনসহ পৌর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন হয়েছে।
কুমিল্লায় সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্যের আচরণবিধি প্রতিপালনে কমিশনের ‘গড়িমসি’ আর ফলাফল ঘোষণা নিয়ে দেরির বিষয়টি ছিল আলোচনায়। ঝিনাইদহে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে ভোট স্থগিত করে দেওয়া হয়।
তবে সবচেয়ে বড় আলোচনা ওঠে সম্প্রতি গাইবন্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন নিয়ে। ঢাকায় বসে সিসি ক্যামেরায় চোখ রেখে অনিয়ম দেখে ইসি ভোট বন্ধ করে দেয়।
এর আগে নির্বাচন নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের ধারাবাহিকতার মধ্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিয়ে সভায় ‘হৈ চৈ’ এর মতো ‘বিব্রতকর’ ঘটনাও ঘটে।
এই প্রেক্ষাপটে বুধবার সভায় যাওয়ার একদিন আগে সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ কমিশন তো মাত্র কয়েক মাস হল আসছে। নতুন একটা জায়গা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান; যে কাজগুলো তারা করছে একেক জায়গায় একেক অভিজ্ঞতা হচ্ছে।
“তারা যেটা করছে বেশ চেষ্টা করছে আস্থা অর্জনের জন্য। কমিশনকে যদি সহযোগিতা করা না হয়, তা হলে ইসির জন্যে এটা ডিফিকাল্ট।”
সিইসির নয়, গাইবান্ধার ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত ইসির: হাবিবুল আউয়াল
গাইবান্ধায় ইসির রশি ছুটল, না বাঁধন কষল?
ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে এখন পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই এখন চ্যালেঞ্জে রয়েছে।…গাইবান্ধা ভোট বন্ধের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে কী চিহ্নিত হল, কীভাবে সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে, এসবই এখন দেখার বিষয়।”
২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের সময় কঠোর অবস্থান নেওয়ায় আলোচিত ছিলেন জেসমিন টুলী। জাতিসংঘের আমন্ত্রণে আফগানিস্তান ও কসোভোতে নির্বাচন প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
তিনি বলেন, আসলে এখন পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই এখন চ্যালেঞ্জে রয়েছে। এক্ষেত্রে আচরণবিধি প্রতিপালন ও ভোটের সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক কিছু করার রয়েছে।
বুধবারের সভা নিয়ে টুলী বলেন, “আমার মনে হয়, আমরা যারা কমিশনে কাজ করেছি, তাদের অভিজ্ঞতাগুলো শুনতে চান, আলোচনা করে বোঝা যাবে। কমিশনের কর্ম পরিকল্পনা কী; নির্বাচনী ব্যবস্থাটার কোথায় কী অবস্থা, কী করার আছে; কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করার চেষ্টা করব।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, “কমিশন সব নির্বাচন ভালো করার জন্য চেষ্টা করছে দেখছি। আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে।”
গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনের তদন্তে দোষীদের চিহ্নিত করে শক্ত পদক্ষেপ নিলে ভবিষ্যতে এমন শঙ্কা কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
সাবেক এ বিচারক বলেন, “কারও অবহেলা থাকলে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন শক্ত থাকলে দৃষ্টান্ত হবে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনাটায় মূল কাজটাই করে মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। সবার মধ্যে একটা সমন্বয় না থাকে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করার ভূমিকা না থাকে, তাহলে ইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ইসিতে থাকা কবিতা খানম বলেন, অধিকাংশ সময় স্থানীয়দের প্রভাবের কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। আচরণবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করা গেলে ভোটের দিন সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ থাকে না আর।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিপালনে নানা ধরনের বাধার অভিজ্ঞতাও রয়েছে ইসির।
কবিতা বলেন, “অনেক সময় সাক্ষ্য প্রমাণ লাগে, এভিডেন্স লাগে-এসব ছাড়া তো হয় না। সবাই সচেতন হলে ও নিজেরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে তা রোধ করা সম্ভব এবং স্থানীয় প্রভাব বন্ধ হলে আচরণবিধি প্রতিপালনও সহজ হয়।”
সাবেক সহকর্মীদের পরামর্শ চাওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. ইসি আলমগীর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকে কাজের ফলে সেগুলো শেখা যায়। উনারা এই ধরনের পরিস্থিতিতে কী ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, তারা কীভাবে সেই সমস্যার সমাধান করেছিলেন-এই বিষয়ে যেহেতু তারা সিনিয়র ছিলেন,একটু আলাপ করা। এবং আমাদের প্রতি তাদের কোন পরামর্শ আছে কি না …”।
‘মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি’
গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের অনিয়মের ‘মাত্রা অনুযায়ী’ শাস্তি দেওয়ার কথা বললেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাময়িক বহিষ্কার থেকে চাকরিচ্যুত করার মতো এখতিয়ার রয়েছে সাংবিধানিক সংস্থা ইসির। সেই সঙ্গে দুর্বৃত্তদের জেল-জরিমানার বিধানও রয়েছে।
অনিয়মের কারণ উদঘাটনে ইসির তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরুর মধ্যে কথা বলেন এ নির্বাচন কমিশনার। মঙ্গলবার পর্যন্ত গাইবান্ধায় তদন্ত পরিচালনায় সাড়ে ছয়শ’ জনের বক্তব্য নিচ্ছে কমিটি।
গত ১২ অক্টোবর সিসি ক্যামেরায় নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ব্যাপক অনিয়মের মধ্যে ভোটের মাঝখানে ভোট বন্ধ করে ইসি।
অনিয়ম দেখলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্থানীয়ভাবে কোনো ধরনের উদ্যোগ না দেখার কথা সিইসি বলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, “যদি তদন্তে প্রমাণ হয় যে, তারা এগুলো করেছে এবং স্ব-উদ্যোগে করেছে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুযোগ ছিল, কিন্তু তারা সেই সুযোগ নেয়নি, তাহলে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা থেকে শুরু করে যে কোনো বিষয় কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
“দুই মাস পর্যন্ত তাদেরকে সাসপেন্ড করে রাখার ক্ষমতা কমিশন রাখে। এছাড়া আইন অনুযায়ী আমরা যে শাস্তির কথা বলব, তা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করে আমাদেরকে আবার জানাতে হবে। যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন, তাদের বিরুদ্ধেও কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারব। সেই ক্ষমতা আইনে দেওয়া আছে।”
আলমগীর বলেন, “দেখতে হবে তারা কি অন্যায়গুলো স্বেচ্ছায় করেছে, না কোনো চাপে পড়ে করেছে। এছাড়া তদন্তের মাধ্যমে অপরাধের মাত্রা বুঝে শাস্তি নির্ধারণ হবে।”
গাইবান্ধা উপ-নির্বাচন বন্ধ করা এ ধরনের ‘আইওয়াশ- বিভিন্ন মহলের এমন সমালোচনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ‘আইওয়াশের’ কোনো বিষয় নেই। কমিশন হল একটি নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তার কাজ হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে নির্বাচনে বৈধ বলবে না ও ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন বাতিল করবেন।”
তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই উপ-নির্বাচনের তারিখ পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপ-নির্বাচনে অনিয়ম: গাইবান্ধায় ৬৮৫ জনের বক্তব্য শুনবে তদন্ত কমিটি
গাইবান্ধা-৫: বিশৃঙ্খলার ভিডিও দেখিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা