মোকাব্বিরের ওয়াক আউটের মধ্যে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল পাস

এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের বলে সংশোধিত আইন কার্যকর হয়ে গেছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2023, 01:43 PM
Updated : 29 Jan 2023, 01:43 PM

সংসদে বিরোধিতার মধ্যে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন), বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে; যদিও এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের বলে সংশোধিত আইন কার্যকর হয়ে গেছে।

সংশোধিত আইনে বিশেষ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা সরকারের কাছে নেওয়া হয়েছে।

এত দিন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করত। এখন দাম বাড়ানোর জন্য এই শুনানির দরকার হবে না। সরকার প্রয়োজন মনে করলে দাম বাড়াতে পারবে।

গত ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যশে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের এই ধারায় সংশোধন আনা হয়। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকেই অধ্যাদেশটি সংসদে উপস্থাপন করতে হয়।

সে অনুযায়ী গত ৫ জানুয়ারি অধ্যাদেশটি সংসদে তুলেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সংসদীয় কমিটি হয়ে আসার পর রোববার বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করেন।

তখন এ বিলের বিরোধিতা করে জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন গণফোরামের নেতা মোকাব্বির খান।

তিনি বলেন, এ বিলটি ‘জনস্বার্থবিরোধী’। তার জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী গ্রহণ করেননি। তাই নিজের সংশোধনী প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন এবং জনস্বার্থে এ বিলের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করছেন তিনি।

মোকাব্বিরসহ কয়েকজন সদস্য বিলের উপর আলোচনা করেন।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, “পানির ট্যাংকে নিচে ফুটে থাকলে কখনোই তা ভরাট করা যাবে না। যতদিন পর্যন্ত রেন্টাল, কুইক রেন্টাল থাকবে, ততদিন এখানে লস থাকবে।”

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, “ঢাকায় দিনের বেলা গ্যাস থাকে না। সকাল থেকে তিনটা চারটা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়।”

বিলটি জনমত যাচাইয়ের জন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে মোকাব্বির খান বলেন, “সরকার গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে দুরবস্থার কারণ লুটপাট আর দুর্নীতি। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।

“অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মানুষের নাভিঃশ্বাস ওঠেছে। মানুষ দিশেহারা। সামনে রমজান। এর আগে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে।”

Also Read: অধ্যাদেশ জারি, বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম ঠিক করতে পারবে সরকারও

Also Read: এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল সংসদে

বিলে সংশোধন প্রস্তাব দিয়ে মোকাব্বির বলেন, “বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বাড়লে সবকিছুর উপর এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু এতে সরকারের কিছু যায় আসে না। মানুষের ওপর আস্থা হারালে সরকার কালো আইন করে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, সরকার কি জনগণের আস্থা হারিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এই আইন করছে? এই আইনের একমাত্র উদ্দেশ্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানো।”

বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “বিদ্যুতে যে সাবসিডি, সেটা মূলত জনগণের প্রতি ইনভেস্টমেন্ট। কুইক রেন্টাল ব্যবস্থা ছিল স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা।”

‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দেওয়ার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “১০ বছরের জন্য একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়া হলে সেখানে থাকুন বা না থাকুন ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। এমন বলা যাবে না যে যে কয়দিন থাকবেন সে কয়দিনের ভাড়া দেবেন।”

এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলের উপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিস্পত্তি শেষে এটি কণ্ঠভোটে দেন, তাতে সংসদ সদস্যরা তা পাস করেন।

বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসবের উৎপাদন বৃদ্ধি, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।