মুনিয়ার বোন বলেছেন, পিবিআইয়ের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি আদালতের কাছে আপত্তি জানাবেন।
Published : 19 Oct 2022, 02:24 PM
কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তার বোনের করা ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ মামলাতেও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের ‘দোষ পায়নি’ পুলিশ।
এ মামলার অভিযোগ থেকে আনভীরসহ আট আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।
মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা পড়লেও বিষয়টি সাংবাদিকরা জানতে পারেন বুধবার।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কশিশনার মো. জসীম উদ্দিন বলেন, “আমরা গতকাল অব্যাহতির সুপারিশপত্র পেয়েছি। সেখানে তদন্ত কর্মকর্তা ‘তথ্যগত ভুল’ বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যায় আনভীর বা অন্যদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাননি তদন্ত কর্মকর্তা।
“আজ সংশ্লিষ্ট হাকিম দেখিলাম লিখে ওই প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করবেন। পরে সেটা সংশ্ষ্টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবনুালে পাঠানো হবে।”
বসুন্ধরার এমডিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ মামলা মুনিয়ার বোনের
মুনিয়ার মৃত্যুর মামলা থেকে বসুন্ধরা এমডিকে অব্যাহতি
মুনিয়ার বোন মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া বলছেন, পিবিআইয়ের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি আদালতের কাছে আপত্তি জানাবেন।
“গত রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে প্রতিবেদন জমা পড়ার নোটিস দেওয়া হয়েছে। আমার আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন, আব্দুল কাইয়ুমকে ঘটনা জানিয়েছি। তার বলেছেন, নারাজি আবেদন প্রস্তুত করা হবে।”
বসুন্ধরার এমডি আনভীরের পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা সোবহান, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সায়েম, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, সাইফা রহমান মিম, ইব্রাহিম আহমেদ রিপন এবং তার স্ত্রী শারমিনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাদেরও অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে পিবিআই।
এর আগে মুনিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে আনভীরকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন তানিয়া। ‘প্রমাণ মেলেনি’ জানিয়ে সে সময়ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পুলিশ।
সেই প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালত আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়। বাদী আপত্তি জানালেও আদালত তাতে সাড়া দেয়নি।
মহামারীর লকডাউনের মধ্যে গতবছর ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ২১ বছর বয়সী মোশারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মুনিয়া ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার মনোহরপুরে; পরিবার সেখানেই থাকেন। মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে এক লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া ওই ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তিনি।
সেই রাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বোন। সেখানে বলা হয়, ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন মুনিয়াকে।
মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করে পুলিশ, যার মধ্যে ছয়টি ডায়েরি ছিল। সিসিটিভির ভিডিও পরীক্ষা করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের ‘প্রমাণ পাওয়ার’ কথাও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।
তবে তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায়’ আনভীরের ‘সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ার’ কথা বলা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
সেই অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কখনো কথা বলেননি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি। মুনিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে তার কোনো ‘সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে গতবছর ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
পুলিশের ওই প্রতিবেদনে অনাস্থা (নারাজি) জানিয়ে মুনিয়ার বোন, মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া অন্য কেনো সংস্থার মাধ্যমে মামলাটি তদন্তের আবেদন করেছিলেন। তা খারিজ করে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী গতবছর ১৮ অগাস্ট চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সায়েম সোবহান আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
বাদীর অন্যতম আইনজীবী ব্যরিস্টার এম সরোয়ার হোসেন সেদিন বলেছিলেন, “আমরা উচ্চ আদালতে রিভিশন চাইব। এ রকম আদেশ আমরা আগেই জানতাম।”
এরপর ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর আনভীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা ও ধর্ষণের’ মামলা করেন মুনিয়ার বোন। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরুজা পারভীন বাদীর বক্তব্য শুনে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
১৩ মাসের মাথায় আদালতে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, “আমি বিস্তারিত তদন্ত করে দেখেছি, আত্মহত্যার সময় আনভীর সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। শারীরিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে, কিন্তু জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যে কারণে আমি ‘তথ্যগত ভুল’ উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলাম।”
পুরনো খবর
মুনিয়ার মৃত্যু: নতুন করে তদন্তের আবেদন, আদেশ বুধবার
মুনিয়ার মৃত্যু: চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানি ১৭ অগাস্ট
মুনিয়ার মৃত্যু: চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেবেন বোন
মুনিয়ার মৃত্যু: আনভীরের ‘দোষ পায়নি’ পুলিশ
মুনিয়ার মৃত্যু: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় পুলিশ
মুনিয়ার ফ্ল্যাটে ‘৬টি ডায়েরি’ পেয়েছে পুলিশ
মুনিয়ার ফ্ল্যাটে যাতায়াত ছিল আনভীরের: পুলিশ
শারুনের বিরুদ্ধে হত্যামামলার আবেদন নিয়ে আদালতে মুনিয়ার ভাই
আনভীর কোথায়, প্রশ্ন মানববন্ধনে
দেশ ছেড়েছেন বসুন্ধরা এমডির স্ত্রী-সন্তানরা
‘গুম-খুনের হুমকি পেয়ে’ মুনিয়ার বোনের জিডি
মুনিয়ার মৃত্যু: বসুন্ধরা এমডি আনভীরের আগাম জামিনের শুনানি হয়নি
দেশ ছেড়েছেন বসুন্ধরা এমডির স্ত্রী-সন্তানরা
‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলায় বসুন্ধরা এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা