নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, "প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সুস্থভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা করার জন্য। আমরা কাজ করছি। তবে নির্দিষ্ট করে সময় বলা যাচ্ছে না।"
Published : 13 Mar 2024, 03:10 PM
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি 'এমভি আবদুল্লাহ' জাহাজের নাবিকদের মুক্ত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌবাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সব পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, নাবিকদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর, নাবিকরা এখনও নিরাপদ ও সুস্থ আছেন, তবে জাহাজ এখন জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
"বাংলাদেশের শিপিং ব্যবস্থা এখন বিশ্বের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। গতকাল আমরা যখন এ বিষয়টি অবহিত হয়েছি, তখন তাৎক্ষণিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আন্তর্জাতিক যতগুলো উইং নৌ পরিবহনের কাজ করে, সবার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। নৌবাহিনীর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ অনেক বেশি, আমরা তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি।
“আমাদের প্রথম গুরুত্ব হল যারা নাবিক আছেন, এবং সঙ্গে অন্য কেউ থাকলে তাদের জীবন নিরাপদ রাখা। নাবিকদের রক্ষা করা, উদ্ধার করা।"
বুধবার দুপুরে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক যৌথ সভায় সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিকের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “যে সকল জলদস্যু জাহাজকে আটকে রেখেছে, জাহাজ এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
"নাবিকরা এখনও নিরাপদ ও সুস্থ আছে। সম্মিলিতভাবে আমাদের দেশের সব উইং আন্তর্জাতিকভাবে যারা সহযোগিতা করতে পারে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য নিরাপদে নাবিকদের ফিরিয়ে আনা।"
নাবিকদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে কতদিন লাগতে পারে– এ প্রশ্নে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, "যে কোনো মূল্যে নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। জলদস্যুদের সঙ্গে থেকে কখন তারা মুক্তি পাবে সেটা বলা মুশকিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সুস্থভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা করার জন্য। আমরা কাজ করছি। তবে নির্দিষ্ট করে সময় বলা যাচ্ছে না।"
কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার সেটি ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে।
নাবিক ও ক্রু মিলিয়ে ওই জাহাজের ২৩ কর্মীর সবাই বাংলাদেশি। তাদের জিম্মি করেছে জলদস্যুরা।
নাবিকরা দেশে তাদের স্বজনদের ফোন করে বলেছেন, তাদের এখন নেওয়া হচ্ছে সোমালিয়ায়। মুক্তিপণ আদায়ে চাপ দিচ্ছে দস্যুরা। টাকা না পেলে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশি ওই জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় বলেছেন, “এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে আর কি। ফাইনাল কথা হচ্ছে যে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদেরকে একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলছে।
“এদেরকে যত তাড়াতাড়ি টাকা দিবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলছে। এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। এখন মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে।”
জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাইদুজ্জামান জাহাজের মালিক পক্ষের কাছে পাঠানো অডিওতে বলেন, “স্যার আমাদের মোবাইল টোবাইল সব সিজ করে নিচ্ছে। এটাই শেষ সুযোগ। আমাদের জাহাজের যে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে, ওটা যদি ওপেন রাখেন আর কি, ওখানে যে কোনো সিচুয়েশনে মেসেজ রাখার চেষ্টা করব।
“ওটা খুলে দিয়ে রাখতে বলেন, তাহলে আমরা সুযোগ মত যোগাযোগ করব।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, "মুক্তিপণের বিষয়টা আমাদের জানা নেই।"
এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ ‘জাহান মণি’। নিকেল ভরতি ওই জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়।
নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের মাথায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা। পরে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
আরও পড়ুন
এমভি আবদুল্লাহ: টাকা না দিলে ‘একজন একজন করে মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা