ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বিবাদের মধ্যে ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যানের অপসারণকে উদ্বেগজনক বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ-টিআইবি।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, “এই ঘটনা অভিযুক্তকে সুরক্ষা দেওয়ার উদাহরণ। এটি সরকারের শীর্ষ অবস্থান থেকে দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতার ঘোষণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”
ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারীকে সুরক্ষা দেওয়ার আইনগত বাধ্যবাধকতার সঙ্গে এটি সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক বলেও মনে করে টিআইবি।
রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে ওয়াসা বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার বালাকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি গোলাম মোস্তফার স্থলাভিষিক্ত হবেন। চেয়ারম্যান পদে গোলাম মোস্তফার মেয়াদ ছয় মাস আগেই শেষ হয়েছিল। এখন নতুন নিয়োগ হওয়ায় তাকে বিদায় নিতে হচ্ছে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের সঙ্গে নানা বিষয়ে মতভেদের পর সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিলেন গোলাম মোস্তফা। সেখানে তিনি বলেছিলেন, তাকসিম খান ওয়াসা বোর্ডের সঙ্গে অসহযোগিতা, ওয়াসা আইন ভঙ্গ করে ‘ব্যক্তিগত সম্পদের মতো স্বৈরাচারী কায়দায়’ ওয়াসা প্রশাসন পরিচালনা করে ঢাকা ওয়াসাকে অনিয়ম, অপচয় আর দুর্নীতির ‘আখড়ায়’ পরিণত করেছেন।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উত্থাপনের পরই বোর্ড চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেবল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফল হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। অপসারিত চেয়ারম্যানের মেয়াদ গত বছর অক্টোবরে শেষ হয়েছে, এতদিন নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়নি।
“অথচ ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে বোর্ড চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ঠিক পাঁচদিনের মাথায় নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হলো। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনাটিকে যদি ‘কাকতালীয়’ হিসেবে মেনেও নেওয়া হয়, তবুও উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অভিযোগকারীকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ‘ওয়াসা পরিচালনায় এমডির ইচ্ছাই শেষ কথা, আর নিজের স্বার্থ সুরক্ষায় যে কাউকে ওয়াসা থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা ওয়াসা এমডির রয়েছে’- এই অভিযোগকেই প্রতিষ্ঠিত করা হলো।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “দুর্নীতি প্রতিরোধ ও ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই বার্তা দেওয়া হলো যে ব্যক্তির পরিচয় ও অবস্থানের বলে অবারিত বিচারহীনতার লাইসেন্স পাওয়া যায়। প্রয়োজনে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বার্তাবাহক বা অভিযোগকারীকে, তা যেই হোক না কেন, তাকে স্তব্ধ করতে ‘শ্যুট দ্য মেসেঞ্জার’ চর্চার ব্যবহারে কোনো দ্বিধা করা হবে না।”