এক ক্লিকে ভোটারকে সব জানাতে অ্যাপ বানাতে চায় ইসি

এটি হলে ভোটার এলাকা, ভোটার নম্বর, ভোটকেন্দ্র, প্রার্থীর তথ্য ভোটাররা খুব সহজেই পাবেন; কাজে দেবে নির্বাচনী কর্তাদেরও।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 03:25 AM
Updated : 23 March 2023, 03:25 AM

ভোটের তথ্য পাওয়া সহজ করতে প্রযুক্তিমুখী হচ্ছে নির্বাচন কমিশন; ভোটাররা আঙ্গুলের স্পর্শেই যাতে সব জানতে পারেন সেজন্য অ্যাপ আনার কাজ চলছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী তথ্যের ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল করতে এমন উদ্যোগ নতুন কমিশনের।

এজন্য ‘ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ’ নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরির উদ্যোগের কার্যক্রম অনেকটাই এগিয়েছে; যেটি ব্যবহার করে ভোটার, প্রার্থী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা নির্বাচন সংক্রান্ত সেবা নিতে পারবেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই অ্যাপটি তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

অ্যাপটি বানাতে ইতোমধ্যে ইসির তথ্যপ্রযুক্তি অনুবিভাগ কাজ শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরে কারিগরি কমিটি গঠনের পর চলতি মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কমিশন তা নিয়ে আলোচনাও করেছে।

নির্বাচন কমিশনার আলমগীর এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় অ্যাপের ডিজাইন, কোথায় কী থাকবে- এগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। এটি তৈরি করতে কারগরি ও অর্থায়নের বিষয় আছে।

এটি পরিচালনা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, “টেনিক্যাল ও আর্থিক সাপোর্ট না পেলে অ্যাপটি তৈরি করা সম্ভব হবে না।“

অ্যাপটির সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, “স্মার্ট এ অ্যাপ তৈরি করতে পারলে অনেক সুফল পাওয়া যাবে। অ্যাপে সব ভোটারের তথ্য থাকবে, ভোটার অ্যাপে ঢুকে জানতে পারবে সে কোন এলাকার ভোটার, কোন‌কেন্দ্রের কোন বুথে তার ভোট দিতে হবে।

“এছাড়া ভোটাররা তার কেন্দ্রে কোন পদে কতজন প্রার্থী, তাদের নাম ও প্রতীক এবং ছবিসহ সব প্রার্থীকে দেখতে পাবে।”

কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা পেলে আগামী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে অ্যাপটি তৈরি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়। এ ধারাবাহিকতায় রোডম্যাপ ঘোষণার সময় আধুনিক নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একগুচ্ছ কর্মসূচিও তুলে ধরে।

সেই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২২ সালের অগাস্ট থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে ‘নির্বাচন বিষয়ক তথ্য সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার’ তৈরির কথা রয়েছে।

সংসদ নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণার এক মাসের মাথায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কশিমনার আলমগীর নির্বাচন ব্যবস্থাপনার নানা তথ্য উপাত্ত নিয়ে ‘ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ’ তৈরির চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন। সেটি নিয়েই এখন কাজ শুরু করেছে ইসি।

তবে অ্যাপ বানানোর পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে অর্থায়নের বিষয়টিও সামনে এসেছে। কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা ছাড়া ইসির পক্ষে এটি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন কমিশনার আলমগীর।

তার মতে, আর্থিক বিষয় জড়িত থাকায় (জাতীয় নির্বাচনে) সিসি ক্যামেরা নিয়েও এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। যদিও এটি ভালো উদ্যেগ ছিল।

নানা সময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশনের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার পাশাপাশি ইসিকে কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দিয়ে যান। তবে কমিশন কারও কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের কারিগরি সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে সাড়া দেয়নি।

বর্তমান কমিশন নিজেদের মেয়াদের এক বছরে সংসদীয় আসনের উপ নির্বাচন, স্থানীয় সরকারের সিটি, পৌরসভা, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদের প্রায় শতাধিক নির্বাচনে ইভিএমে ভোট নিয়েছে। সিটি করপোরেশন, সংসদের উপ নির্বাচন, পৌরসভা ও জেলা পরিষদের ভোটেও সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করেছে।

অনলাইনে মনোনয়নপত্র নেওয়ার বিষয়ে একটি ‘পাইলট প্রকল্প’ শুরুর উদ্যোগও নিয়েছে। প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত হলে প্রথমে ছোট ছোট নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরুর ভাবনা ইসির। এগুলোর মাধ্যমে ভোট সংক্রান্ত কার্যক্রম ডিজিটাল করতে চায় ইসি।

রোডম্যাপে নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা

>> দেশের সব নির্বাচন অফিসে ‘সিকিউরড’ মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভিপিএন কানেকশন স্থাপন করা হয়েছে।

>> নির্বাচন সংক্রান্ত সব তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

>> নির্বাচনকালীন নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহ ও ফলাফল প্রস্তুতে ‘ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার’ প্রস্তুত করা হয়েছে।

>> ভিপিএনের আওতায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম চালানো হয়।

>> মাঠ পর্যায়ের অফিসে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন, নির্বাচনী ক্যালেন্ডার, অনলাইনে মনোনয়ন জমা, প্রার্থীর তথ্য ব্যবস্থাপনা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার ডেটাবেইজ, কেন্দ্রের তথ্য ব্যবস্থাপনা, ফলাফল পাঠানো সংক্রান্ত সিস্টেম হালনাগাদ করা হবে।

>> জিআইএস পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তথ্য হালনাগাদ করা হবে।

>> অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য নির্বাচনী হলফনামা, ভোটকেন্দ্র সংক্রান্ত তথ্য, নির্বাচনী তথ্য (নির্বাচনী তথ্য সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন) প্রকাশের ব্যবস্থা করা হবে।

>> ভোটগ্রহণের প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে।

>> অনলাইন কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (কমপ্লেইন্ট ও কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন) প্রস্তুত করা হবে।

>> প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা (প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন) আধুনিকীকরণ করা হবে।

নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহারে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ নিয়ে এসব কাজ শেষ করার সর্বোচ্চ সময়সীমা রাখা হয়েছে এ বছরের অক্টোবরের মধ্যে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই আরও ডিজিটাল হওয়ার লক্ষ্য ইসি।

নিয়ম মেনে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে।

আরও পড়ুন:

Also Read: অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা: পাইলট প্রকল্পের ভাবনা ইসিতে

Also Read: সিসিটিভিতে ‘নতুন অভিজ্ঞতা’, জেলার ভোটে ‘সন্তুষ্ট’ সিইসি

Also Read: সরকারে যেই থাক, ভোট হবে নিরপেক্ষ: ‘গ্যারান্টি’ আলমগীরের

Also Read: সব দলকে ভোটে পাওয়ার আশায় আছি, ইইউকে সিইসি

Also Read: নারায়ণগঞ্জে ভোটে স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে স্মার্ট বুথ

Also Read: ইসির রোডম্যাপ: মহানগর ও জেলা সদরে ইভিএমে ভোট

Also Read: কে জিতল বিবেচ্য নয়, ‘জনরায় চায়’ যুক্তরাষ্ট্র: পিটার হাস

Also Read: সহযোগিতার প্রস্তাব পশ্চিমাদের, বিবেচনার আশ্বাস সিইসির