সিসিটিভিতে ‘নতুন অভিজ্ঞতা’, জেলার ভোটে ‘সন্তুষ্ট’ সিইসি

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল মনে করেন, গাইবান্ধা উপ নির্বাচনে কঠোর হওয়ায় এবার জেলা পরিষদের ভোটে ‘ইতিবাচক প্রভাব’ পড়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2022, 09:57 AM
Updated : 17 Oct 2022, 09:57 AM

গাইবান্ধার অভিজ্ঞতার পর জেলা পরিষদের ভোটের প্রায় পুরোটা সময় ঢাকার নির্বাচন ভবনের মনিটরিং সেলে সিসিটিভির পর্দায় চোখ রেখে বসেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল; শেষ পর্যন্ত খুশি মনেই তিনি চেয়ার ছেড়েছেন।

সোমবার বেলা ২টায় ভোট শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে সিইসি বলেন, “৫৭টি জেলা পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ভেতরে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি, কোনো রকম অনিয়ম, সহিংসতা, গোলযোগ, গণ্ডগোলের তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। আমরাও দেখিনি, টেলিফোনেও যেসব সংবাদ পেয়েছি, ভোট সুন্দর ছিল, আমরা সন্তুষ্ট।”

কেবল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিতে পারেন বলে জেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটার থাকে কম। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরাই জেলা পরিষদে নির্বাচিত হন, কারণ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির তালিকায় তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এসব কারণে এ নির্বাচনে উত্তাপ ততটা থাকে না।

তারপরও নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ-আনসার মিলিয়ে ৭ জনকে নিয়োজিত করা হয়েছিল এ নির্বাচনে। গাইবান্ধা উপ নির্বাচনের মতই সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকার মনিটরিং সেল থেকে সব জেলার ভোটের পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন সিইসি হাবিবুল আওয়াল। নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, আনিছুর রহমান ও মো. আলমগীর এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

Also Read: জেলা পরিষদে ভোট চলছে

Also Read: জেলা পরিষদ ভোট: ‘চাপ’ অনুভব করছেন না সিইসি

Also Read: জেলা পরিষদে ভোট: মোবাইল ফোন নিয়ে ভোটকক্ষে যেতে মানা

সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ৪৬২টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য মিলিয়ে ৬৭১ জন জনপ্রতিনিধি বাছাই করতে ভোটার ছিলেন সব মিলিয়ে ৬০ হাজার ৮৬৬ জন।

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধায় বর্তমান ইসির অধীনে প্রথম ভোটে সিসি ক্যামেরায় ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেখে মাঝপথে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয় ইসি, যা নিয়ে নানামুখি আলোচনা তৈরি হয়।

তবে সিইসি বলছেন, উপ নির্বাচনে কঠোর হওয়ায় এবার জেলা পরিষদের ভোটে ‘গুরুতর অনিয়ম না হওয়ার মত ইতিবাচক প্রভাব’ পড়েছে।

ভোট শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিসিটিভির মাধ্যমে ‘নতুন অভিজ্ঞতা’ হয়েছে নির্বাচন পরিচালনায়।

“আমাদের পর্যবেক্ষণটা আরও সমৃদ্ধ করেছি, নিঃসন্দেহে আমার সহকর্মীরাও সন্তুষ্ট। আগামীতে সকলকে আরও ভালো সুযোগ করে দেবে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের, কারণ আমরা স্বচ্ছ সুন্দর নির্বাচন চাই।”

সবার ভোটাধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে ইসি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে সিইসি বলেন, “আজ আপনারা দেখেছেন, ভোট কক্ষে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি যায়নি। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে যারা ভোটার, তারা ভোট দিয়েছেন। ভোটার সংখ্যা কম এখানে; দেখে সবাইকে ভদ্র, মার্জিত মনে হয়েছে।

জেলা পরিষদে ৬০ হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি ভোট দিয়েছেন। কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়া সবাই ভালো করে ভোট দিতে পেরেছেন।”

Also Read: জেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোটের দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে চট্টগ্রামের ডিসিকে

Also Read: জেলা পরিষদের দ্বিতীয় ভোট ১৭ অক্টোবর

Also Read: গাইবান্ধায় ইসির রশি ছুটল, না বাঁধন কষল?

অনিয়মের কারণে গাইবান্ধার উপ নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার নজিরবিহীনভাবে ঘটনার প্রসঙ্গ ধরে সিইসি বলেন, “অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গাইবান্ধায় গুরুতর অনিয়ম আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, কমিশন শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোট বন্ধ করে দিতে। ইসি নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে।

“সেখান থেকে হয়ত একটা মেসেজ এসেছে, যেভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়, অনেকে দেখেছেন, সিসি ক্যামেরায় গুরুতর অনিয়ম হলে বন্ধ হয়ে যাবে…। কাজেই আমরাও মনে হয় ওটার একটা পজিটিভ ইম্প্যাক্ট এ নির্বাচনে পড়েছে।”

জেলা পরিষদে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোট দেওয়ার কোনো ঘটনাও ‘নজরে পড়েনি’ বলে জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল।

দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। পরে হাই কোর্টের আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালীর নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এছাড়া ভোলা ও ফেনীর সকল পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে সোমবার ভোট হয়েছে ৫৭ জেলা পরিষদে।

এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন; সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৮ জন আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বাড়ার বিষয়েও সিইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “এ নিয়ে মন্তব্য নয়, এ বিশ্লেষণে আমরা যাইনি। এটা আমাদের বিষয় নয়, এটা রাজনীতিবিদরাই মনে করবেন।”

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সিইসি বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের কথা এখন ভাবছি না, সময় হলে দেখা যাবে।... (সিসি ক্যামেরা ব্যবহার) সক্ষমতা ছোট পরিসরে। সড় পরিসরে সড় সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা থাকবে।”