জেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোটের দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে চট্টগ্রামের ডিসিকে

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, তদন্ত করে তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2022, 09:09 AM
Updated : 18 Sept 2022, 09:09 AM

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার পর মোনাজাতে অংশ নিয়ে আর বক্তৃতা দিয়ে সমালোচনায় থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমানকে ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ।

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা রোববার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, কী ঘটেছিল তা তদন্ত করে তারা পরবর্তী নেবেন।

“মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার পদ থেকে অব্যহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই আপনারা জানতে পারবেন। উনাকে আমরা রাখব না, সরিয়ে দেব।”

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। এজন্য তদন্ত হতে হবে। এটা লঘু শাস্তি নয়। এই মূহুর্তে করণীয় একটাই, তাকে সরিয়ে দেওয়া। পরেরটা পরে দেখা যাবে। এখন কাজ হল উনাকে সরিয়ে দিয়ে উপযুক্ত অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া।"

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সরকারদলীয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম গত ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর তার সঙ্গে থাকা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা দলীয় প্রার্থীর জয় কামনা করে মোনাজাত ধরেন।

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানও মোনাজাতে হাত তোলেন। মোনাজাত শেষে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতাও করেন।

উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করলাম। এখানে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত আছেন। কিছু কথা বলি।

“হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি ও আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।”

Also Read: হঠাৎ মোনাজাত, কিছু করার ছিল না: চট্টগ্রামের ডিসি

রিটার্নিং কর্মকর্তা মমিনুর সেদিন বলেন, “আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার পর থেকেই এ নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এতে সিদ্ধান্ত হবে রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের শক্তির হাতে থাকবে নাকি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির হাতে যাবে।

“আমি মনে করি যে, রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যদি থাকে; আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বলি, বিএনপি বলি জামায়াত বলি- সবাই নিরাপদ থাকবে। আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।”

জেলা প্রশাসক আওয়ামী লীগ নেতাদের নিজেদের মধ্যে ‘দূরত্ব কমানোর’ পরামর্শ দেন এবং আগামী শারদীয় দুর্গোৎসবে সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান।

তার ওই বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি এ ধরনের অবস্থান নিতে পারেন কি না, ওই বক্তব্য দেওয়ার পর তিনি ভোটের দায়িত্বে থাকতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ হঠাৎ মোনাজাত ধরলে তখন কিছু করার থাকে না।”

তবে সে সময় দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে তার ভাষ্য, “দুর্গাপূজা উপলক্ষে সম্প্রীতি সভায় আমি বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে যে বক্তব্য তা বিকৃত করা হচ্ছে। অন্য বিষয়ের সাথে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এটা ডিসটর্ট করা হচ্ছে। আর কিছু বলতে চাই না।”