হঠাৎ মোনাজাত, কিছু করার ছিল না: চট্টগ্রামের ডিসি

মোনাজাতের পর রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মমিনুর রহমান বলেন, “আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।”

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2022, 10:45 AM
Updated : 16 Sept 2022, 10:45 AM

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার পর মোনাজাতে অংশ নিয়ে আর বক্তৃতা দিয়ে সমালোচনায় থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেছেন, হঠাৎ মোনাজাত ধরায় তার করার কিছু ছিল না। 

তার ভাষ্য, “দুর্গাপূজা উপলক্ষে সম্প্রীতি সভায় আমি বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে যে বক্তব্য তা বিকৃত করা হচ্ছে। অন্য বিষয়ের সাথে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এটা ডিসটর্ট করা হচ্ছে। আর কিছু বলতে চাই না।” 

জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সরকারদলীয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।   

মনোনয়নপত্র জমাদানের পরপরই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সফর আলী দলীয় প্রার্থীর জয় কামনা করে মোনাজাত ধরেন। জেলা প্রশাসকও তাতে অংশ নেন। মোনাজাত শেষে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতাও করেন। 

বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে সুজনের চট্টগ্রাম সাধারণ সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী বলছেন, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ধরনের কাজ করতে পারেন না।  

তবে বিষয়টিকে ‘ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে’ মন্তব্য করে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলছেন, দুর্গাপূজা নিয়ে সম্প্রীতি সভাতেই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। 

এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা মনোনয়নপত্র জমা দিতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু সেসময় হঠাৎ মোনাজাত ধরার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।” 

আর এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মনোনয়ন জমাদানের সময় মোনাজাত হয়েছে ঠিক। কিন্তু ওইসময় নেতাবেষ্টিত থাকায় একজন মুসলমান হিসেবে মোনাজাতে অংশ না নিয়ে তিনি (ডিসি) সেখান থেকে সরে যেতে পারেননি।”  

জেলা প্রশাসকের রাজনৈতিক বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেখানে একটি মিটিং ছিল। আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে কথা হয়েছে। তখন তিনি কিছু কথা বলেছেন। নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলেননি।”  

মনোনয়নপত্র গ্রহণের পর জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করলাম। এখানে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত আছেন। কিছু কথা বলি। 

“হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি ও আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।” 

রিটার্নিং কর্মকর্তা মমিনুর বলেন, “আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার পর থেকেই এ নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এতে সিদ্ধান্ত হবে রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের শক্তির হাতে থাকবে নাকি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির হাতে যাবে। 

“আমি মনে করি যে, রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যদি থাকে; আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বলি, বিএনপি বলি জামায়াত বলি- সবাই নিরাপদ থাকবে। আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।” 

জেলা প্রশাসক আওয়ামী লীগ নেতাদের নিজেদের মধ্যে ‘দূরত্ব কমানোর’ পরামর্শ দেন এবং আগামী শারদীয় দুর্গোৎসবে সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান।  

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকালের সভা ছিল একটি সম্প্রীতি সভা। দুর্গাপূজার প্রস্তুতি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ওইসভার আয়োজন করা হয়। সভা চলাকালে এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম তার মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। ওই বক্তব্যের সাথে পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়ন জমাদানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।”  

মোনাজাতের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “কেউ হঠাৎ মোনাজাত ধরলে তখন কিছু করার থাকে না।”  

মনোয়নপত্র প্রদানের সময় বোয়ালখালীর সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ, মহানগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সুজন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্তরে ভেতরে কিছু থাকলেও বাইরে নিরপেক্ষতা দেখানো দরকার ছিল। এমনিতেই নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা, অবিশ্বাসের জায়গা রয়েছে।”  

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশের প্রতি, সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকতে হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসক যা করেছেন, সবকিছু হারিয়ে ফেলেছেন। নির্বাচনী বিষয়কে খেলো করেছেন। 

“নির্বাচন কমিশনের উচিত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এখন থেকে যদি এমন চলতে থাকে মানুষের মধ্যে আরও খারাপ ধারণা জন্মাবে।”