সরকারে যেই থাক, ভোট হবে নিরপেক্ষ: ‘গ্যারান্টি’ আলমগীরের

“শপথ করেছি সেটা যদি না-ই করতে পারি, তাহলে এই চেয়ারে থাকব কেন?”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2023, 10:41 AM
Updated : 16 March 2023, 10:41 AM

দলীয় সরকার থাক কিংবা নির্দলীয় সরকার, তা নির্বাচন কমিশনের কাজে কোনো প্রভাব রাখবে না বলে দাবি করছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, যে ধরনের সরকারই থাকুক না কেন, বর্তমান ইসি শততাগ সৎ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে।

“পৃথিবীর সব দেশেই প্রায় দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। এটা নির্ভর করে নির্বাচন কমিশন কতটা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি এবং সেটা আমাদের ইচ্ছা আছে, অবশ্যই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।”

গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচনকালীন সরকারই আলোচনার সবচেয়ে বড় বিষয়। বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতির ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে এলেও তাতে গা নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের।

নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, সে বিষয়ে কিছু বলার বা করার এখতিয়ার ইসির না থাকার কথা বলেন আলমগীর। পাশাপাশি দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে এই বিরোধে কমিশনের করার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আলমগীর বলেন, “এটা রাজনৈতিক সমস্যা, রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। এ বিষয়টাতে আমাদের কিছু করার নেই। সংবিধানও সে দায়িত্ব আমাদের দেয়নি।

“নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভোট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকা। নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন তারা স্বাধীনভাবে প্রচার করতে পারেন, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ইচ্ছেমত তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, ভোট গননা যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, নির্বাচনের ফলাফল যাতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় ভোটারদের ইচ্ছার, সেটা ইসির দায়িত্ব।”

সেই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনে ইসি কোনো আপস করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা গ্যারিন্টি দিচ্ছি নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে।

“যদি কম্প্রোমাইজ করতে হয়, তাহলে তখন আমাদের এই চেয়ারে দেখবেন না। আমরা যে কাজের জন্য শপথ করেছি সেটা যদি না-ই করতে পারি, তাহলে এই চেয়ারে থাকব কেন? আমাদের কমিশনে যারা আছি, সকলের মনোভাব এ রকমই।”

এক্ষেত্রে নজির হিসেবে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনকে দেখান আলমগীর, যেখানে ভোটারদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠলে গোটা আসনে ভোট বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।

তারপরও বিএনপির আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার কারণ খুঁজে না পাওয়ার কথাও বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।

“বিরোধী পক্ষ কেন আস্থায় নিচ্ছে না (নির্বাচন কমিশনকে), সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে ইসির এক বছরে কার্যক্রম দেখে তারা কি বলতে পারবে, কমিশন নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করেছে অথবা কারও প্রতি আচরণ দুই রকম হয়েছে?”

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বর্তমান কমিশন সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা দিয়ে বিএনপিসহ সবাইকে নির্বাচনে আসতে আহ্বান জানাচ্ছে।

তবে বিএনপি তার অবস্থান পাল্টানোর কোনো ইঙ্গিত এখনও দেয়নি। তারা বলছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের ‘ইচ্ছায় কাজ করে’। এই যুক্তিতে ইসির ডাকে কোনো সংলাপেও যায়নি দলটি।

আবার সংলাপে বসার আহ্বান

সঙ্কট দুর করার জন্য কমিশনের উদ্যোগ না থাকলেও ভোটের আগে দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা বসার আগ্রহের কথাও জানান মো. আলমগীর।

তিনি বলেন, “আমাদের বিভিন্ন অংশীজন, সুশীল সমাজের মতামত নেওয়ার ক্ষমতা তো দেওয়া আছে। এখন আর হচ্ছে না। হয়ত পরবর্তীতে হতে পারে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হতে পারে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হতে পারে।

“অর্থাৎ সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনেন জন্য যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি, তাদের সঙ্গে তো আমরা নির্বাচনের আগে আবারও বসতে পারি। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।"

জাতীয় নির্বাচনের আগে সব পক্ষের সমান সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়টি আমরা তফসিল ঘোষণা আগে দেখব। আমাদের কিছু কৌশল থাকবে, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেই কৌশলগুলো তো আমরা বলব না।

“অবশ্যই কিছু কৌশল থাকবে। নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে, গ্যারান্টি দিচ্ছি আমরা। আমরা যতক্ষণ আছি এই চেয়ারে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাব।”

ভোট নিয়ে কোনো চাপ নেই বলেও জানান তিনি। বলেন, “বিদেশি-দেশি কেউ কোনো চাপ দেয় না, চাপ নেই। আমরা বিশ্বাস করি আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করব।”