“দাঁড়ানো মাত্রই শব্দ। সেই ধাক্কায় উল্টে গিয়ে ফুটপাতে পড়ে যাই,” বলছিলেন সেকেন্ডের ব্যবধানে সিদ্দিক ভবনের ভয়াবহ বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পাওয়া পাশের ভবনের এক নিরাপত্তা কর্মী।
Published : 08 Mar 2023, 12:27 AM
পুরান ঢাকার সিদ্দিক ভবনের এক পাশে একটি ভবন বাদেই কাদের ম্যানশন। এ ভবনের নিরাপত্তা কর্মী রুবেল হোসেনের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না ভয়াল সেই ঘটনার কয়েক সেকেন্ড আগের ও পরের সময়টুকু।
আশেপাশের মানুষের মাঝে আতঙ্ক জাগানো এ বিপদ থেকে কীভাবে তিনি বেঁচে গেছেন তা কয়েক ঘণ্টা পরেও তাকে ভীত করে তুলছে।
গায়ে কাঁটা দেওয়া সেই ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের আগ মুহূর্তে আমি ওই ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে এসে আমাদের (কাদের ম্যানশন) গেইটের সামনে দাঁড়াই। দাঁড়ানো মাত্রই শব্দ। বিকট সেই শব্দের ধাক্কায় উল্টে গিয়ে ফুটপাতে পড়ে যাই। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি ধোঁয়া আর ধোঁয়া। কানে কিছুই শুনি না। কয়েক মিনিট পর শুনতে পাই।’’
মঙ্গলবার বিকাল পৌনে পাঁচটায় সিদ্দিক রোডের ঘনবসতি এলাকা নর্থ সাউথ রোডের ক্যাফে কুইন নামে পরিচিত সাত তলা ভবনে বিকট বিস্ফোরণ হয়। এতে এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিহত হওয়ার খবর এসেছে। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও অনেকে।
ভয়াবহ বিস্ফোরণে ভবনটির দ্বিতীয় ও প্রথম তলা ধসে আন্ডারগ্রাউন্ড ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সেই ধ্বংসস্তুপে রাতে আর প্রবেশ করতে পারেননি উদ্ধার কর্মীরা।
‘যেন মৃত্যুই তাদের ডেকে নিয়েছিল’
বিকালের হঠাৎ সেই বিস্ফোরণ এতটাই বিধ্বংসী ছিল ভবনের দেয়ালের ভাঙা টুকরো আঘাত হেনেছে সড়কে থাকা মানুষকে। আশেপাশের ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক দূরের মানুষজনও বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছেন। আতঙ্ক কাটতে তাদের সময় লেগেছে।
ক্যাফে কুইন লাগোয়া ব্র্যাক ব্যাংকের পাশেই সাত তলা কাদের ম্যানশন। এ ভবনের নিরাপত্তা কর্মী রুবেলের মত অন্য বাসিন্দারও বিস্ফোরণের ভয়াবহতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ওই সময় সবাই যেন একটা ঝাঁকুনি খেয়েছেন।
তাদের ভবনে বড় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও সবাই ভীত হয়ে পড়েছেন বলে জানালেন কাদের ম্যানশনের মালিক শাকিল আহমেদ।
‘মানুষ উড়ে এসে পড়েছিল রাস্তায়, গাড়ির ওপরও’
তিনি বলেন, ‘‘এত জোরে শব্দ হয়েছে যে ভবনটিকে মনে কেউ ঝাঁকুনি দিয়েছে। এই কম্পনে বিভিন্ন তলার বাসা ও দোতলার দোকানগুলোর আসবাব খুলে নিচে পড়ে গিয়েছে। কারও ফ্যান খুলে পড়েছে, ওয়ালে থাকা জিনিসপত্র খুলে পড়ে গিয়েছে।’’
বিস্ফোরণের ভয়াবহতা দেখে ভবনের অধিকাংশ বাসিন্দাই আশপাশে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন বলেও জানান তিনি।
কাদের ম্যানশনের দক্ষিণের শেষ মাথায় নিচ তলায় দুটি স্যানিটারি দোকানের দুই কর্মীকে খুঁজে না পাওয়ার কথা জানালেন স্থানীয়রা। এদের মধ্যে ইউসুফ স্যানেটারির মালিক নুরু মিয়া একজন। অপরজন জয়নাল স্যানেটারির কর্মচারি, যার নাম বলতে পারেননি উপস্থিতরা।
ঘটনাস্থল থেকে ৩০০ গজ দূরে গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট। ওই মার্কেটের নিচ তলার দোকানদার লিটন হায়দারও শব্দের তীব্রতায় হকচকিয়ে যান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘এরকম বিকট আকারের শব্দ আগে কখনই শুনিনি। খুব জোরে শব্দটি হয়। কানে এত বড় শব্দ শুনতে পেয়ে ঘটনার কারণ জানতে রাস্তায় বের হই।
‘‘বিকালে কর্মব্যস্ত এ রাস্তায় গাড়ির হর্ন সব সময়ই থাকে। তাতে ট্রান্সফরমার বার্স্ট হলেও শব্দ বেশি দূর যায় না। কিন্তু এ শব্দ শুনে মনে হয়েছে কিছু বিস্ফোরিত হয়ে ফেটে গিয়েছে।’’
সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণ: নিহত বেড়ে ১৭, উদ্ধার অভিযান স্থগিত
বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে মিনিট পাঁচেক দূরত্বের আরেক ব্যস্ত এলাকা নবাবপুর রোড। এ সড়কেও রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের আরেকটি শাখা। সেখানে প্রতিদিন বিকালে মাঠা ও ছানার সরবত বিক্রি করেন সালাম মিয়া।
তিনি বলেন, ‘‘শব্দ হওয়ার পর এ এলাকার ভবনগুলোর কাচগুলোও কেঁপে উঠে। আমিও ভয় পেয়ে যাই কিসের শব্দ শুনলাম। পরে জানতে পারি সিদ্দিক বাজারে কোনো কিছুর বিস্ফোরণ হয়েছে।’’
ক্যাফে কুইনের লাগায়ো পাঁচ তলা ভবনে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলিস্তান শাখা। বিস্ফোরণের পর সেখানে আসেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।
ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শাখা সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। কাচের টুকরোর আঘাতে কর্মীদের মধ্যে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।